আর আমদানি নয়, এবার দেশেই তৈরি হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) এর অধীনে পরিচালিত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যে খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে উন্নয়নকৃত ব্রি হেড-ফিড কম্বাইন হারভেস্টারের প্রথম প্রটোটাইপের মাঠ পরীক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ কৃষির যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ৩’শ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যেখানে এসব যন্ত্রাংশের দামের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ টাকা ভতুর্কী দিচ্ছে সরকার। এসব যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। ফলে দেশে কম্বাইন হারভেস্টার উৎপাদন হওয়ায় বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
গতকাল সোমবার সিলেটের খাদিমনগরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষি খামারে হারভেস্টার মেশিনের সফলভাবে মাঠ পরীক্ষণ সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ এর কারিগরী সহযোগিতায় দেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিকমানের দেশীয় উপযোগী ব্রি হেড ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এই যন্ত্রটি উন্নয়ন/উদ্ভাবন গ্রুপের প্রধান গবেষক ছিলেন উক্ত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ব্রি’র খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম, সহযোগী গবেষক ছিলেন একই বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান পিন্টু ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরাফাত উল্লাহ খান।
এই কৃষিযন্ত্রটি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষকরা একই সাথে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করতে সক্ষম হবেন। প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা তাদের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। হেড ফিড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে খড়ের কোন ক্ষতি হবে না, খড় আস্ত থাকবে। আমাদের দেশের কৃষকরা যারা পশুপালন করেন তাদের কাছে পশুর খাদ্য হিসেবে খড়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেসব অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন করা হয় সেখানে শুকনো খড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। তাছাড়া কৃষকরা জ্বালানী, কাঁচা ঘরের ছই দেয়া, বীজ জাগ দেয়াসহ নানা কাজে খড় ব্যবহার করেন। তাই ধানের খড় সংরক্ষণ করাও অত্যন্ত জরুরি যা এই যন্ত্রের একটি বাড়তি সুবিধা বলে বিবেচিত হবে।
শতভাগ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যে বর্তমানে কৃষিযন্ত্রটি চায়না, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। এই ধরনের একটি যন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানী করতে ৪০-৪৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে যেখানে ব্রি হেড ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি ২৫-৩০ লক্ষ টাকায় প্রস্তুত করা সম্ভব।
ফলে এর উৎপাদন খরচ আমদানীকৃত কম্বাইন হারভেস্টারের তুলনায় অনেক কম হবে। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরিকৃত বিধায় যন্ত্রটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ প্রাপ্তিতে কোন সমস্যা হবে না। স্থানীয়ভাবে এই যন্ত্রটি ব্যাপকভাবে তৈরী করা সম্ভব হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ‘ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টার’ নামে আরেকটি হার্ভেস্টার উদ্ভাবন করা হয়েছে যার সাহায্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শণীর মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বিনামূল্যে ধান কাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া এবং অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মোঃ মাহবুবুল হক পাটোয়োরী এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।
মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ও এই যন্ত্রের মূখ্য গবেষক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলীমুল এহছান চৌধুরী, প্রোডাকশন ম্যানেজার মাহবুব হাছান, ব্রি’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরাফাত উল্লাহ খান, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গবেষণা কর্মকর্তা শ্যামল দেবনাথ ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার প্রাপ্ত স্বনামধন্য কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর কারখানায় এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটি তৈরীর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্প সক্ষমতার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।