সুস্থ থাকতে হলে শরীরের ওপর ইউরিক অ্যাসিডের প্রভাব এবং এর ভূমিকা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের রাসায়নিক। শরীর থেকে এই রাসায়নিক ছেঁকে বের করে দেওয়ার কাজ করে কিডনি। কিন্তু কোনো কারণে কিডনি অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড সরাতে অক্ষম হলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়াটাকে মেটাবলিক সিনড্রোমের অংশ বলা হয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ডায়াবেটিস থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাছাড়া যদি নিকট আত্মীয়দের কারো এ সমস্যা বা কিডনি পাথর, গাউটের সমস্যা থাকে, তাহলে সেই রোগীর ইউরিক অ্যাসিড-জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আবার জীবনশৈলী-সংক্রান্ত সমস্যা থেকে ইউরিক অ্যাসিডের আশঙ্কা থাকে। সে জন্য লিপিড প্রোফাইল বেশি থাকলে ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করে বহু ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিডও বেশি পাওয়া যায়। যদি কারো ক্ষেত্রে রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের হার বেশি থাকলেও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকে, তাহলেও ১/২ বছর অন্তর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করানো দরকার।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। যেমন : অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধি ফুলে হাড়ে অস্বস্তি হওয়া, ক্র্যাম্প দেখা দেওয়া ইত্যাদি। ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ত্বক শুষ্ক হতে পারে। এ ছাড়া গাউটের সমস্যা এবং দুর্বলতাও উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ।
ইউরিক অ্যাসিড অপসারণে কিডনির অক্ষমতার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ প্রাকৃতিক কিছু উপায় অনুসরণ করতে পারেন। যেমন—
বেশি পানি পান : শরীর থেকে ইউরিক এসিড কমানোর সবচেয়ে সহজ প্রাকৃতিক উপায় হলো প্রচুর পানি পান করা। শরীর যখন পর্যাপ্ত পানি পায়, তখন ইউরিক অ্যাসিড স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। দিনে ২ লিটার অর্থাৎ কমপক্ষে চার গ্লাস পানি পান করলে শরীরে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমতে শুরু করে।
অ্যালকোহল পান কমানো : অ্যালকোহল বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে কাজ করে। এসব পানীয় পান করা কমিয়ে দিলে ইউরিক অ্যাসিডের বাড়াও বন্ধ হবে।
পিউরিন গ্রহণ বন্ধ : খাবারে অতিরিক্ত পিউরিন থাকলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। সেজন্য পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কমাতে হবে। যেমন- সেলফিশ, মাশরুম এবং অ্যালকোহলে পিউরিন থাকে।
ব্যায়াম বা খেলাধুলা : শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে হলে আপনাকে সক্রিয় থাকতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম বা খেলাধুলা করুন যাতে ইউরিক অ্যাসিড নিজে থেকেই কমতে শুরু করে।
আমলকীর রস : প্রতিদিন সীমিত পরিমাণে আমলকীর রস খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ইউরিক অ্যাসিড কমায়।
টক-জাতীয় ফল : আমলকি ছাড়াও অন্য যে-কোনো টক ফল বা ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
বেশি আঁশযুক্ত খাবার : বেশি আঁশযুক্ত খাবার, যেমন : সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে। এই আঁশযুক্ত খাবার শরীর থেকে ইউরিক এসিড মল আকারে বের করে দেয়।
গ্রিন টি : গ্রিন টি ইউরিক এসিড কমাতে সহায়তা করে। তাই ইউরিক এসিড কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করতে পারেন।
তবে মনে রাখতে হবে যে এসবই করতে হবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে।