ঢাকাশনিবার , ৪ নভেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

ইন্টারনেটে ভাষার চর্চা : একক ভাষা হিসেবে ইংরেজির আধিপত্য

পাবলিকহেলথ ডেস্ক :
নভেম্বর ৪, ২০২৩ ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ । ২০৭ জন

ভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, ভাষা মানুষের পরিচয়। ভাষা অস্তিত্ব প্রকাশ করার উপায়। ভাষা প্রাণের অনুরণন। ভাষা একটি জাতিসত্তার নির্দেশক। ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিসরের বাইরে মানুষ আধুনিক প্রপঞ্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজ ভাষাকে বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে দেয়; একই সঙ্গে ব্যক্তি মানসের পরিচয় ঘটে ভাষার বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যের সঙ্গে। এভাবে ভাষার রূপ পরিবর্তন এবং নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে বেরিয়ে সর্বজনীন করে তুলতে কাজ করে নিউমিডিয়াগুলো।

প্রযুক্তির বদৌলতে বদলে যাওয়া বিশ্বের বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুশো কোটি ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৭০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। কিন্তু ইন্টারনেট গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি কোন ভাষা ব্যবহার করে; এমন প্রশ্নের উত্তরে আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি পাওয়া ইংরেজির নাম এলেও সেটি কত শতাংশ গ্রাহকের ভাষা, সেই উত্তর সহজ অনুমেয় নয়।

ইন্টারনেটে সর্বাধিক চর্চিত ১০ ভাষা

১৮১৪ সালে ব্রিটেনের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার জনক নোয়াহ ওয়েবস্টার চিন্তা করেন, ব্রিটেনের থেকে সর্বার্থেই ভিন্ন কিন্তু নতুন একটি সর্বজনস্বীকৃত ভাষার উদ্ভাবনই সেদেশের মানুষকে একটি নতুন পরিচিতি দেবে। সেই ভাবনা থেকে ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে আমেরিকান বানান ও নতুন নতুন শব্দ সংযুক্ত করা হয়, যা ব্রিটিশদের ইংরেজি বানান থেকে ভিন্ন। ইংরেজি ভাষায় আমেরিকার একটি নিজস্ব ডিকশনারি তৈরিতে সময় লাগে প্রায় ১৮ বছর, যার জন্য ওয়েবস্টার নিজে ২৬টি ভাষা শিখেছিলেন। অথচ আজকের দিনে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভাষার বিকাশ ঘটছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।

স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশে ওয়েব মাধ্যমে ইংরেজি একক ব্যবহৃত ভাষা মনে হলেও, ২০১০ সালে প্রথমবারের মত ইন্টারনেটে বেশিরভাগ তথ্য উপাত্তই ছিল ইংরেজি নয় এমন সব ভাষায়। নতুন কম্পিউটার প্রযুক্তি অ-রোমান ভাষাসমূহ ব্যবহার করে পড়া ও লেখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। তবে বৈশ্বিক ইন্টারনেট গ্রাহকের ২৫.৯ শতাংশই ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে থাকে।

অবশ্য ইংরেজির পরই অবস্থান চাইনিজ ভাষার। কেননা বর্তমানে চীনের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যাদের বেশিরভাগই যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষা পছন্দ করে থাকে। তাদের হার ১৯.৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ডাটা স্ট্যাটিসটিকার তথ্য মতে, ইন্টারনেটে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ ব্যবহারকারী নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্প্যানিশ ভাষা। এরপরই আরবি ৫.২, ইন্দোনেশিয়ান ও মালেয়শিয়ান ৪.৩, পর্তুগিজ ৩.৭, ফ্রেন্স ৩.৩, জাপানিজ ২.৬, রাশিয়ান ২.৫ ও জার্মান ভাষা ব্যবহারের হার ২ শতাংশ। অবাক করার মত তথ্য এটিই যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হলেও তাদের ৭৭ শতাংশই এই ১০ ভাষা ব্যবহার করছে।

অথচ বিশ্বের মাত্র ৪টি দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৯৮ ভাগ মানুষের ভাষা ইংরেজি হলেও খোদ আমেরিকায় ৭৮ শতাংশ মানুষ ইংরেজিকে প্রধান ভাষা হিসেবে নিয়েছে। এর বাইরে কানাডায় ৮৭ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৭৬ শতাংশ মানুষ ইংরেজি ব্যবহার করছে।

তবে গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহার করছে এবং ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা, তাদের চেয়েও দ্বিতীয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। যা ক্রমান্বয়ে আরো বাড়ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ ভিন্ন ভাষাভাষির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ, বানান বা উচ্চারণ তথা ভাষাগত বিভ্রান্তি এড়ানো।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন ডিসি’র ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক নাওমি ব্যারন বলেন, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় এমন মানুষদেরও গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবোধকভাবে এই ভাষা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। এবং ইন্টারনেটে যোগাযোগ করতে পারাই মুখ্য ব্যাপার। তাই ভাষার ব্যবহার কেমন হবে তা কেউ বলে দিতে পারে না। ফেইসবুকে যোগাযোগ করা বা নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষার অসাধারণত্ব মূল বিবেচ্য বিষয় নয়, বলেন অধ্যাপক ব্যারন। যেকারণে একক ভাষা হিসেবে ইংরেজির দৌরাত্ম্য কমবে না, বরং বাড়বে।