ই-সিগারেট নিয়ে বাংলাদেশে তামাক কোম্পানিগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে তরুণদের লক্ষ করে সিগারেট ছাড়ার মাধ্যম হিসেবে ই-সিগারেট/ভ্যাপ নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে তারা। একইসঙ্গে সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর তুলে ধরে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তাদের ব্যবসার স্বার্থে। ই-সিগারেট কোনোভাবেই সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর নয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
সম্প্রতি বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ২২টি সংগঠন যৌথভাবে ‘ই-সিগারেট/ভেপিং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি : নিষিদ্ধ জরুরি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পাবলিকহেলথ২৪ ডটকমের পাঠকের জন্য তার বক্তব্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাক ছাড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। যেমন নিকোটিন কমিয়ে আনার থেরাপি বা অন্যান্য ঔষধপত্র আছে যেটা চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেখানে তামাক ছাড়ার সহায়তাকারী হিসেবে ই-সিগারেটকে কিন্তু রিকমেন্ডেশন করা হয় না। তাই এটাকে কখনোই আমরা তামাক ছাড়ার সহায়তাকারী বলতে পারবো না। কেউ যদি সিগারেট ছাড়তে চায়, তার জন্য ঔষধ আছে। এর জন্য ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রয়োজন নাই। এই বিষয়টি আমি পরিষ্কার করতে চাচ্ছি। কারণ বাজারে এক ধরনের প্রচারণা আছে যে, আমি তামাক ছাড়তে চাই, সেজন্য আমি এখন ই-সিগারেট ব্যবহার করছি। আস্তে আস্তে ই-সিগারেট কমিয়ে নিয়ে আসবো। কিন্তু দেখা যায় এটা ইচ্ছামত কিনতে পারছে।
হৃদরোগ এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ঔষধ যেমন প্রেসক্রিপশন অনুয়ায়ী নিতে হয়, ই-সিগারেটের ব্যাপারটা ওরকম না। সুতরাং মানুষজন আসলে নিকোটিন আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এবং আমাদের বোঝা উচিত যে, ই-সিগারেট তামাক ছাড়ার জন্য সহায়তাকারী না। এবং এটা কেউই রিকমেন্ড করে না। তামাক ছাড়ার জন্য অন্যান্য অনেক উপায় আছে।
তিনি জানান, এক ধরনের ধারণা নিয়ে ই-সিগারেট নিয়ে আসা হয়েছিল, বলা হয়েছিলো এটা হার্ম রিডাকশনের বস্তু। মানে এটা ক্ষতি কম করে। কিন্তু এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, এটা যে হার্ড রিডাকশন সে কথা ভুলে গিয়ে আমরা রিডাকশনের কথাটা আর মনে রাখি; হার্মের কথা আর মনে রাখি না। হার্ম কিন্তু আছেই। সুতরাং ক্ষতি আমাদের করছে। এটা কেউ বলছে না, ক্ষতি করছে না। হয়তো সিগারেটের তুলনায় ক্ষতি কম করছে।
আরেকটা বিষয় হলো, এতে নিকোটিন আছে। আর নিকোটিন তো মূল নেশাকারী। এই নিকোটিনের কারণে নেশা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে নিকোটিনের কারণে যে শারীরিক ক্ষতিগুলো হয়, সেটা হচ্ছে। একই সঙ্গে কেমিকেলগুলোও ক্ষতি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে গেছে। এবং শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগগুলোও হচ্ছে। সুতরাং আমাদের মনে রাখতে হবে, কেন আমরা যে জিনিসটা এখনো বাংলাদেশে ব্যাপ্তি লাভ করে নাই, সেই জিনিসটাকে গোড়াতেই কেন বন্ধ করবো না।
দীর্ঘদিনের হৃদরোগের চিকিৎসা ও তামাক নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ডা. সোহেল রেজা বলেন, আমরা জানি যে, কয়েকটা দেশে এটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছিলো, পরে তামাক কোম্পানির চাপে এটাকে ওপেনলি বাজারজাত করতে দেয়া হয়েছে। এবং পরে দেখা গেছে মহামারীর মধ্যে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এটা ছড়িয়ে গেছে। এমনকি উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা এটার ব্যবহার শুরু করেছে। অথচ এত কম বয়স থেকে এত মাত্রায় নিকোটিন গ্রহণ করলে অবধারিতভাবে শারীরিক ক্ষতিগুলো হবে। বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা বন্ধে ভ্যাপ, হিটেড টোব্যাকোসহ সব ধরনের ই-সিগারেট এখনই নিষিদ্ধ করার সঠিক সময় বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় বলা হয়, ই-সিগারেট তামাক ব্যবহার ছাড়ার জন্য সহায়তা করতে পারে। অনেক দেশে এটি সেই ধারণা দিয়েই আনা হয়েছিলো। কিন্তু এটা উল্টো ফল দিতে শুরু করলো। এটা খুব একটা সহায়তা করছে বলে মনে হয় না। বেশিরভাগ লোক যারা তামাক ছাড়ার চেষ্টা করেন এবং ই-সিগারেট ব্যবহার করেন, একটা সময় পর তারা আবার সিগারেটে ফিরে যাচ্ছেন, সেরকমই দেখা যাচ্ছে।