ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভে আকাশপথে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, যাকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নগরীটিতে চালানো বৃহত্তম ড্রোন হামলা বলে মনে করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। রোববার কিইভের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, এই উদযাপনের প্রস্তুতি চলাকালে ভোররাতে এ হামলা চালানো হয়। ইউক্রেইনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার পাঠানো ৫৪টি ‘কামিকাজে’ ড্রোনের মধ্যে ৫২টি তারা ভূপাতিত করেছে। এটিকে তারা একটি রেকর্ড হামলা বলে অভিহিত করেছে। তবে এসব ড্রোনের মধ্যে কতগুলোকে কিইভের আকাশ থেকে গুলি করে নামানো হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। চলতি মাসে এটি কিইভে রাশিয়ার চালানো ১৪তম হামলা এবং সম্ভবত প্রথম প্রাণঘাতী আক্রমণ। কিইভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো জানিয়েছেন, ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভোররাতে চালানো এ হামলাটি হয়েছে মে মাসের শেষ রোববারে, যেদিন কিইভের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। ১৫৪১ বছর আগে নগরীটির পত্তন হয়েছিল। এদিন সাধারণত রাস্তায় রাস্তায় মেলা, লাইভ কনসার্ট এবং জাদুঘরে বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এ বছরও একই ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে তবে ছোট পরিসরে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দপ্তরের সচিব আন্দ্রি ইয়ারমাক টেলিগ্রামে বলেছেন, “ইউক্রেইনের ইতিহাস নিরাপত্তাহীন রাশিয়ানদের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরক্তিকর (ব্যাপার)।” দেশটির বিমান বাহিনী টেলিগ্রামে জানিয়েছে, রাশিয়া বিশেষভাবে কিইভ অঞ্চলসহ ইউক্রেইনের কেন্দ্রস্থলের সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্যস্থল করেছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, তারা এসব তথ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি। ইউক্রেইনের একটি পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা যতই নিকটবর্তী হচ্ছে মস্কো ততই আকাশপথে হামলা তীব্র করে তুলছে। এসব হামলায় তারা প্রধানত সামরিক এলাকা ও সরবরাহকে লক্ষ্যস্থল করছে। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বেশ কয়েক বার হামলার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই চলেছিল যে শহরকে কেন্দ্র সেই দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় বাখমুতে সংঘর্ষের ঘটনা কমে এসেছে বলে কিইভ জানিয়েছে। কিইভ এমনটি জানানোর পরই নগরীটি লক্ষ্য করে ব্যাপক এ হামলা চালনো হলো। ইউক্রেইনের রাজধানীর সামরিক প্রশাসনের প্রধান সেরহি পপকো জানিয়েছেন, হামলাটি একের পর এক ঢেউয়ের মতো চালানো হয়েছে আর বিমান হামলার সতর্ক সঙ্কেতগুলো পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বেজেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক পেচারস্কি মহল্লাসহ কিইভের বেশ কয়েকটি এলাকা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হলোসিভস্কি এলাকায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে তিনতলা একটি বিশাল গুদামে আগুন ধরে যায় বলে মেয়র ক্লিচকো জানিয়েছেন। সোলোমিয়ানস্কি এলাকায় ড্রোনের পড়তে থাকা ধ্বংসাবশেষে সাততলা একটি অনাবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়। কিইভের এই এলাকাটি ব্যস্ত রেল ও বিমান পরিবহনের কেন্দ্র। একইভাবে পেচারস্কি মহল্লার নয়তলা একটি ভবনের ছাদে আগুন ধরে যায় আর ডার্নিটস্কি এলাকায় একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে কিইভের সামরিক প্রশাসন টেলিগ্রামে জানিয়েছে।