ঢাকামঙ্গলবার , ৩০ জুলাই ২০২৪

ক্যান্সার প্রতিরোধের ৮ উপায় এবং ৮ টি খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৩০, ২০২৪ ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ । ৫৪ জন

ক্যান্সার মারণ রোগ। গবেষণা চলছে এই রোগের ওষুধের। ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় নেই বললেই চলে। কারণ চিকিৎসা নেওয়ার পর অনেক মানুষ মারা যান। কিন্তু এমন কিছু কী নেই, যাতে এই রোগটি আমরা ঠেকাতে পারি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন আনলেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ক্যান্সারের এখনো পর্যন্ত ভালো কোন মেডিসিন তৈরী হয়নি। যার ফলে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। তবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা করে এই জটিল রোগটির কিছু প্রতিরোধক খাদ্য নির্ধারণ করেছেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধের ৮ উপায়

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, আটটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসেই ক্যান্সারের পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। এ অভ্যাসগুলো একেবারেই জটিল নয়। তাই সহজ বিষয়গুলো মেনে স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রণ নিন। এবং আপনার পরিবারকেও একই কাজ করতে উৎসাহিত করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ
আপনার ওজন যদি বেশি হয়, প্রাথমিকভাবে আর ওজন না বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মেদস্থূলতা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীকালে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু নিয়ম মেন চলুন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং চলাচলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করুন। এছাড়া ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবার খান। ছোট অংশগুলো নির্বাচন করুন এবং ধীরে ধীরে খান। টেলিভিশন দেখা এবং কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সীমিত করুন।

নিয়মিত ব্যায়াম
ব্যায়াম খুবই উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। যদিও সময় বের করা কঠিন হতে পারে, তবুও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য নিজের প্রয়োজন মতো কিছু ব্যায়াম নির্বাচন করুন। প্রতিদিন একই সময় রেখে ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। দুপুরের খাবারের সময় জিমে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং রাতের খাবারের পর নিয়মিত হাঁটুন।

ধূমপান আর নয়
ধূমপান শুধু যে ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ তা নয়, এটি খাদ্যনালী স্বরযন্ত্র মুখ-গহ্বর গলা কিডনি মূত্রথলি অগ্ন্যাশয় পাকস্থলী এমনকি জরায়ুমুখের ক্যান্সার-ঝুঁকিও বাড়ায়। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহে যত ধরনের ক্যান্সার হতে পারে তার ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ধূমপান ও তামাকের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। তাই আর দেরি নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসেবে আজই ধূমপান ছাড়ুন। সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার শিশুর সঙ্গে ধূমপান এবং তামাক চিবানোর বিপদ সম্পর্কে কথা বলুন।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট
স্বাস্থ্যকর খাবারের মূল বিষয়গুলো বেশ সহজবোধ্য। প্রতিবেলার খাবার তালিকায় ফল এবং শাকসবজি রাখুন। ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান। লাল মাংস খাবেন খুবই কম। খারাপ চর্বি কমানো এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। জলপাই বা ক্যানোলা তেল দিয়ে তৈরি খাবারগুলো বেছে নিন, যা স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত। ফাস্ট ফুড এবং দোকানে কেনা স্ন্যাকস (কুকিজের মতো), যা খারাপ চর্বিযুক্ত, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

অ্যালকোহল পরিমিত পান করুন
পরিমিত মদ্যপান হার্টের জন্য ভালো। কিন্তু এটি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি যদি পান না করেন তবে মনে করবেন না যে আপনাকে শুরু করতে হবে। আপনি যদি ইতোমধ্যেই পরিমিতভাবে পান করেন (নারীদের জন্য দিনে একেরও কম পানীয়, পুরুষদের জন্য দিনে দুইটির কম পানীয়), সম্ভবত বন্ধ করার কোনো কারণ নেই। যারা বেশি পান করেন, তাদের অবশ্য কমিয়ে দেওয়া উচিত। এজন্য খাবার এবং পার্টিতে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় নির্বাচন করুন। অ্যালকোহলকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলুন। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার অ্যালকোহলের সমস্যা আছে, তাহলে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলুন।

সূর্য থেকে নিজেকে রক্ষা করুন
উষ্ণ সূর্যের আলো খুবই দরকার। তবে এটির অত্যধিক তাপ ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।। ত্বকের ক্ষতি শৈশব থেকেই শুরু হয়। তাই শিশুদের রক্ষা করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকুন। কারণ এই সময়টাতে রোদের তাপ অনেক ক্ষতিকর। ওই সময়টাতে বের হতে হলে টুপি, লম্বা হাতা শার্ট এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

যৌন সংক্রমণ থেকে রক্ষা
অন্যান্য সমস্যার মধ্যে, যৌন সংক্রমণ – যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) – বিভিন্ন ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত। এই সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা আপনার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। এজন্য সেরা সুরক্ষা হলো এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা, যার যৌন সংক্রমণ নেই। অন্যান্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সব সময় কনডম ব্যবহার করতে ভুলবেন না এবং অন্যান্য নিরাপদ-যৌন অনুশীলন অনুসরণ করুন।

স্ক্রিনিং টেস্ট
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্ক্রিনিং পরীক্ষা রয়েছে, যা ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। এর মধ্যে কিছু পরীক্ষা ক্যান্সারকে প্রথম দিকে খুঁজে পায়, যখন সেগুলো সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা করা যায়, অন্যরা আসলে ক্যান্সারকে প্রথম স্থানে বিকাশ হতে সাহায্য করতে পারে। শুধু কলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য, নিয়মিত স্ক্রীনিং প্রতি বছর ৩০ হাজারেরও বেশি জীবন বাঁচাতে পারে। এজন্য কোলন এবং রেকটাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

ক্যান্সার প্রতিরোধক ৮ টি খাবার

ক্যান্সারের এখনো পর্যন্ত ভালো কোন মেডিসিন তৈরী হয়নি। যার ফলে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। তবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা করে এই জটিল রোগটির কিছু প্রতিরোধক খাদ্য নির্ধারণ করেছেন। নিন্মে এই খাদ্য তালিকা নিয়ে কিছু বর্ণনা দেওয়া হল ।

গাজর (Carrots)

আমরা জানি চোখের দৃষ্টি শক্তির জন্য গাজর (Carrots) ভীষণ উপকারী একটা সবজি। কিন্তু গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র চোখ নয়, গাজর কয়েক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর, বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার (Prostate Cancer) ।গাজরে রয়েছে beta-carotene, lycopene, lutein, and zeaxanthin যা Carotenoids হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত এবং এটা শরীরেল ক্যান্সার প্রতিরোধক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সপ্তাহে তিনবার গাজর খেলে শতকরা ১৮% ভাগ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ফুলকপি (Cauliflower)

ফুলকপিতে (Cauliflower) vitamin C, vitamin K, folate, pantothenic, vitamin B6, Minerals and Sulforaphane নামে এক ধরনের যৌগরয়েছে,যা শরীরে ক্যান্সারের টিউমার বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়। এজন্য ফুলকপি ভাল করে চিবিয়ে খেতে হবে, যাতে Sulforaphane যৌগটি শরীরেরনির্দিষ্টক্যান্সার কোষ গুলো ধ্বংস করতে পারে।

অ্যাভোকাডো (Avocados)

অ্যাভোকাডো (Avocados) ফল হিসেবে অনেকের পছন্দের তালিকাতে না থাকলেও খাবার হিসেবে এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর । বিশেষ করে, অ্যাভোকাডোতে রয়েছে শক্তিশালী anti-oxidants and phytochemicalsপাশাপাশি ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার ও Molecules নামে এক ধরনের শক্তিশালী Fat রয়েছে, যা Acute Myeloid Leukaemia (AML) প্রতিরোধক হিসাবে প্রমাণিত। AML is a deadly form of cancer. তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যাভোকাডোর উপস্থিতি আপনার শরীরের অস্বাভাবিক কোষ ( Abnormal Blood Cells ) সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করবে।

ব্রকলি (Broccoli)

ব্রকলি (Broccoli)-তেও ফুলকপির মতো শক্তিশালী Sulforaphane রয়েছে যা prostate cancer প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভাবে উপযোগী। তাই নিজেকে সুস্থ্য রাখতে এবং জটিল রোগ থেকে দুরে থাকতে ব্রকলি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

টমেটো (Tomatoes)

টমেটো ভীষণ স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। রান্না করা, কাঁচা অথবা সস হিসাবে টমেটো ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে বিশেষ ভাবে কাজ করে। টমেটোতেlycopene নামে শক্তিশালী একটি antioxidantsরয়েছে যা কিনা প্রোস্টেট কান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর।

আখরোট (Walnuts)

আপনি কি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চান ? তাহলে আপনার উত্তরটা হওয়া উচিৎ আখরোট (Walnuts) । আখরোট (Walnuts)একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ ,অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড এবং ওমেগা ৩ (omega 3) আছে। সকালের নাস্তার সাথে অথবা স্নাক্স হিসেবে আখরোট উপযুক্ত খাবার।

আদা (Ginger)

আদা একটি উদ্ভিদ মূল, যা মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। It has powerful antioxidant, anti-inflammatory and anti-tumor effects on cells. – আদার অনেক প্রমাণ ভিত্তিক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যেমন জ্বর, ঠাণ্ডা, হার্টের সমস্যা, কোলেস্টেরল কমানো, আর্থ্রাইটিস সহ ক্যান্সার-এর মত জটিল অসুখ নিরসনে আদা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ক্যান্সার নিরাময়ের প্রতিষেধক হিসাবে প্রচলিত কেমোথেরাপি থেকে আদা ১০,০০০ গুন বেশি শক্তিশালী মেডিসিন যা শরীরের নিদৃষ্ট ক্যান্সার ( Cancer Cells ) গুলো ধংস করতে সাহায্য করে।

রসুন (Garlic)

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি। বিশেষ করে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দূর করতে রসুনের জুড়ি নেই। তবে রসুনের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হচ্ছে এটি শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে colon, stomach, intestinal, and prostate ক্যান্সার। রসুন এমন একটি উপকারী ও শক্তিশালী খাদ্য যার antibacterial properties শরীরের ক্ষতিকর Cancer cells এর ছড়িয়ে পরাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।