ঢাকাবুধবার , ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গোমতীর পানি কমায় বাড়ছে ভাঙন, ভিটেমাটি হারা ১৫ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪ ২:৩৮ অপরাহ্ণ । ২১ জন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় গোমতীর পানি কমার সাথে সাথে নদীর তীরবর্তী উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি এলাকায় তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে নদীর ভাঙন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার ভোরে অন্তত ১৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে আরও কয়েকটি পরিবারসহ গোমতীর বেড়িবাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এখনই ভাঙন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কয়েকটি গ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি এলাকায় নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে আনোয়ার হোসেন, রিপন মিয়া, শহিদ মিয়া, রাজু মিয়া, সাজু মিয়া, আনিছ মিয়া, শরিফ মিয়া, শাহিনুর বেগম, সকিনা বেগম, হাছান মিয়া, নুরুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, হক মিয়া সহ অন্তত ১৫টি পরিবার। এ ছাড়াও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, বৈদ্যুতিক খুঁটি, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছের পুকুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্তমানে নদীর তীরবর্তী আরো বেশ কয়েকটি পরিবার নদী ভাঙনের আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। অনেকেই বসতভিটা থেকে থাকার একমাত্র আশ্রয়স্থলটুকু ভেঙে নিয়ে গেছে অন্যত্র। সর্বক্ষণ ভাঙন আতঙ্কে, অনিদ্রা, অনাহারে প্রহর গুনছেন সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলো। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সর্বমহলের সহায়তা চেয়ে মানববন্ধনও করেছেন এখানকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের বসত বাড়িসহ আশেপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িঘর গোমতী নদীর ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটির কোনো চিহ্নই এখন নেই। বর্তমানে যেখানে আছি সেটিও বিলীন হওয়ার পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি। সব সরকারের আমলেই আমরা এ বিষয়টি জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা এসে দেখে নদী ভাঙন রোধের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

চার ছেলের চার ঘরসহ নিজের ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সিএনজি চালক রিপন মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া এখন কই থাকবো। আমার থাকার কোনো জায়গা নাই। সরকার যদি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে না দেয় তাহলে মরন ছাড়া উপায় নাই।’

এ বিষযয়ে নবীপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের প্রধান কারণ হচ্ছে, শুকনো মৌসুমে অবৈধভাবে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যায় ইট ভাটায়। বর্ষা মৌসুমে এর প্রভাব না পড়লেও, যখন নদীর পানি কমতে থাকে তখনই ভয়ঙ্কর রূপ নেয় নদী ভাঙন। যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ এ অবৈধ মাটিকাটা বন্ধ না করতে পারলে একসময় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ টিকিয়ে রাখা কষ্ট হয়ে যাবে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিফাত উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে নদীর পাড়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা গুলো চিহ্নিত করে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে একটি তালিকা প্রেরণ করা হবে। তাদের সহযোগিতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতীর পানি কমার সাথে সাথে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই আমরা সেগুলোর একটা তালিকা করে তা উপর মহলে পাঠিয়েছি। নদী ভাঙন রোদে আমাদের কোনো নিজস্ব বাজেট নেই, তাই আমরা নিজে থেকে কিছু করতে পারছি না। তবে নদী ভাঙনের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে গোমতীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া। এই বিষয়ে আমরা নিয়েমিত অভিযান পরিচালনা করে একাধিক মামলাও করেছি।