পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত চাঁদপুরের সব হাটবাজারে বেশিরভাগ শাকসবজির দাম ৩/৪ সপ্তাহ আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে স্বস্তি এলেও ফসল চাষের খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাচীনতম পাল বাজারের পাইকারি আড়তে শীতকালীন শাকসবজির সমাহার। দৈনিক কয়েক টন শাকসবজি আড়তে আসছে বলে জানান বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।
প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাকসবজি নিয়ে শহরের ১০ নম্বর ঘাটে ভিড়ছে নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌযান চাঁদপুর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের প্রায় ৩০টি চরাঞ্চল থেকে তরতাজা শাকসবজি নিয়ে এই বাজারে আসে।
সেসব পণ্য ঘাটে নামানোর পর বাজারের ২০-২৫টি পাইকারি আড়তে নেওয়া হয়। এরপর পাইকারি মূল্যে সেখান থেকে কিনে নিয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তা বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজার, পাল বাজারের খুচরা বাজার, নতুন বাজার, পুরান বাজার, ওয়ারলেস বাজার, মিশন রোডের চৌরাস্তা বাজার, শহরতলীর আনন্দবাজার, বাবুরহাট, শাহতলী ও মহামায়া বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শাকসবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কম দামে সবজি পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।
এসব বাজারে বর্তমানে নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ ১০-১৫ দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া পেপে ৩০টাকা কেজি, ভালো মানের টমেটো ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, গাজর ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস যা ৮-১০দিন আগে বিক্রি হতো ৪০-৫০ টাকায়, বাঁধা কপি ৩০ টাকা পিস, যা ৮-১০ দিন আগে বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকায়, ব্রকোলি ৫০-৬০ টাকা পিস, কাঁচা কলার হালি ৩০টাকা, করলা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, লাউ (মাঝারি সাইজ) ৪০ টাকা পিস, কাঁচা মরিচ ৪০-৪৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ৪০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা , ধুন্দল ও শসা ৩০ টাকা কেজি এবং খিরার কেজি বর্তমানে ২০ টাকা।
এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, কুমড়া শাক, মুলা শাক, কলমিশাক, কলাই শাকসহ সব ধরনের শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০/১৫ দিন আগেও এগুলোর দাম ছিল ৫০ টাকার আশপাশে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের সব বাজারেই আজকাল শাকসবজির আমদানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে নৌ ও সড়ক পথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি আসছে, তাই দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা চালাতে তাদের মুলধনও কম লাগছে।
এদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে চাষ করা পেঁয়াজ-রসুন বাজারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দামও পড়ে গেছে। কিছুদিন আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১০ টাকা, আর এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। ২১০ টাকার রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে এবার ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ-রসুনের চাষ হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল এবার ১০ হাজার টন যা গতবারের তুলনায় বেশি।
স্থানীয় পর্যায়ে পেঁয়াজ-রসুনসহ সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে বিদেশের ওপর আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমবে। এতে পণ্যের দাম কমায় ক্রেতারা যেমন উপকৃত হবেন, কৃষকরাও সার্বিকভাবে লাভবান হবেন বলে মত জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোবারক হোসেনের।