ঢাকারবিবার , ২ মার্চ ২০২৫
  • অন্যান্য

চুয়াডাঙ্গায় রমজানে বেড়েছে মুড়ি মিলের ব্যস্ততা, ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২, ২০২৫ ২:২৪ অপরাহ্ণ । ১৩ জন

ইফতারের প্রধান উপকরণ মুড়ি। এটি সাধারণত প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকলেও, রমজান মাসে এর চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়। চুয়াডাঙ্গার মুড়ি মান ও স্বাদের জন্য পরিচিত। তাই রমজানে এখানকার মুড়ির বাজার বেশ জমজমাট হয়। চাহিদা বাড়ার ফলে মিলগুলোর কর্মব্যস্ততাও বেড়েছে কয়েকগুণ।

চুয়াডাঙ্গার মুড়ি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়। এতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এ কারণে এ জেলার মুড়ি আশপাশের জেলাগুলোতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের আগে থেকেই মুড়ির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, সাধারণ সময়ে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মণ মুড়ি উৎপাদিত হয়। তবে রমজান মাস আসার পর এই উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মণ। হিসেব অনুযায়ী, ৫০ কেজি চাল থেকে গড়ে ৪৪ কেজি মুড়ি উৎপাদিত হয়। ফলে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার কেজি মুড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মুড়ি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর খুচরা বাজারে এর দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন অধিদফতরের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক সহিদুল ইসলাম জানান, ‘রমজান উপলক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার মুড়ি শুধু জেলার মধ্যেই নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলাতেও সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মুড়ি উৎপাদিত হচ্ছে, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের বাজারেও যাচ্ছে। ফলে পুরো রমজান মাসে চুয়াডাঙ্গার মুড়ির বাজারে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।

এসময় মুড়ি মিলের শ্রমিকদের ব্যস্ততাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মিলের শ্রমিকরা জানান, রমজান এলেই আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সারাদিন কাজ করতে হয়, তবে এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কারণ এই মৌসুমেই আমরা বেশি আয় করতে পারি। সাধারণ সময়ে দিনে ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করলেও, এখন ১২-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ফলে আমাদের আয়ও ভালো হয়।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি মুড়ির মিল রয়েছে। এসব মিলে প্রতিদিন তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই দিনমজুর শ্রেণির মানুষ, যারা মূলত এই মৌসুমে অধিক আয় করার সুযোগ পান।

নিরাপদ খাদ্য অফিসার সজিব পাল জানান, আমাদের টিম নিয়মিত বাজার থেকে মুড়ির নমুনা সংগ্রহ করছে এবং পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি, ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমেও তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা ভেজাল মেশানো না হয়।

তিনি আরও বলেন, মুড়ি উৎপাদনে বেশিরভাগ মিল সার ও কেমিক্যালের পরিবর্তে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে লবণপানি ব্যবহার করছে, যার ফলে এখানকার মুড়ির স্বাদ অনেকটাই হাতে বানানো মুড়ির মতো মোটা ও সুস্বাদু। এ কারণেই চুয়াডাঙ্গার মুড়ির এত জনপ্রিয়তা রয়েছে।

তবে, চাহিদার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কেমিক্যাল মিশ্রিত ও নিম্নমানের মুড়ি তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান বলেন, মুড়ি উৎপাদনে কোনো অনিয়ম বা কেমিক্যাল ব্যবহারের অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি মিলকে সতর্ক করা হয়েছে এবং জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করছি, বাজারে যেন মুড়ির কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় এবং ভোক্তারা যেন মানসম্মত মুড়ি পান। আমাদের নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রয়েছে।

রমজান মাসে মুড়ির বাজার চুয়াডাঙ্গার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে, মান বজায় রেখে মুড়ি উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।