ঢাকামঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাপা’র ৮ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ৩০, ২০২৪ ৪:০৩ অপরাহ্ণ । ১২১ জন

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আজ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ মঙ্গলবার সকাল ১১.০০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে “তাপদাহের তীব্রতাঃ দায় কার? করণীয় কি?” -শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাপা’র ৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব।

এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক মিহির লাল শাহা, চেয়ারম্যান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত তাপ নিয়ন্ত্রণে ৮ দফা দাবিগুলো হলো :
১. বন ও বনভূমি সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর/ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ, প্রণোদনা ও আইনভঙ্গকারীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা।

২. সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পথভ্রষ্ট ‘সম্প্রসারণ উন্নয়নে’র নামে বসবাসযোগ্য নগর পরিবেশ ধ্বংসে যেভাবে সচেষ্ট, তা থেকে তাদেরকে সম্পূর্ণ নিবৃত করে কার্যকর ‘সবুজায়ন নীতিমালা’র ভিত্তিতে সংরক্ষণ নিশ্চিত করে ভারসাম্যপূর্ণ এবং দেশজ বৃক্ষ রোপন ও লালনের কর্মসূচি কার্যকর করার পাশাপাশি ‘নগর বন’ সৃষ্টির ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি ও কর্পোরেট ভিত্তিক সবুজায়ন ও বনায়ন উদ্যোগকে প্রণোদিত ও কখনো কখনো বিশেষভাবে উৎসাহিত করার প্রয়াস নিতে হবে।

৩. নগরব্যাপী বিদ্যমান পুকুর, খাল এবং অন্যান্য জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণপূর্বক নগরীর বাসযোগ্যতা উন্নয়নে সমন্বিতভাবে “নীল অন্তঃসংযোগ” গড়ে তোলার পাশাপাশি নদীর সাথে তাদের সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয় আশু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, নগরীতে বিদ্যমান পুকুর, জলাধার ও জল সংরক্ষণ উদ্যোগগুলোর ত্বরান্বিত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. সমীক্ষানির্ভর নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রণোদনা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সাম্যতার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিতার নগরদর্শন নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও সংস্থাগুলোকে নিয়ে আশু উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যক্তি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং জনমানুষকে নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে তাপদাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সামর্থ্যের জায়গাটি কাজে লাগানো প্রয়োজন।

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সঠিক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বিধায় এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. যত্রতত্র নিয়ন্ত্রিত কাচের ভবনের ‘আত্মঘাতী সংস্কৃতি’র বিপরীতে প্রকৃতির নির্ভরতায় জীবন আচরণ নিশ্চিতের ‘নগর দর্শন’ভিত্তিক বিনির্মাণ নিশ্চিতে অনতিবিলম্বে ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা’য় যথোপযুক্ত শুদ্ধিকরণের উদ্যোগ প্রয়োজন। যদিও রাজউক তাড়াহুড়া করে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং অংশিজনদের সাথে পরামর্শ গ্রহণ ব্যতিরেকে পাশ কাটানোর চেষ্টা মাধ্যমে সেই সুযোগকেও হত্যা করার চেষ্টা করছে। আশু উদ্যোগের মাধ্যমে তা প্রতিহত ও যথাযথ করা প্রয়োজন।

৭. নগরীতে বায়ু ও গ্যাসীয় দূষণের প্রধান প্রধান নিয়ামকসমূহ যেমন, অনুপোযোগী যানবাহন চলাচল, নির্মাণ কার্যক্রম ও মালামালের পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণ জনিত দূষণ, ইটভাটাজনিত দূষণ, ময়লার ভাগাড়, কারখানার নির্গত ধোঁয়াসহ অন্যান্য বায়ু দূষণকারী কার্যক্রম রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কার্যকরী ও দৃষ্টান্তমূলক দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকারী-বেসরকারী স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দ্বারা গৃহীত প্রকল্পের আওতায় নগর বায়ু ও বর্জ্য দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার অভিঘাতের বিরুদ্ধে অভিযোজন ও ভারসাম্য নিশ্চিতের কর্মসূচীগুলোকে সুবিন্যস্ত ও সুপরিকল্পিতকরণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তোলা জরুরী বিবেচনায় অন্যতম দাবী।

৮. সামগ্রিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পরিবেশবাদী, পেশাজীবীসহ সকলের সম্মিলিত ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য একটি সবুজায়ন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ইউএসএইড, বন অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো মিলে বৃক্ষশুমারী করেছে। সেই আলোকে দেশব্যাপী সুপরিকল্পিত নগর সবুজায়ন নীতিমালা ভিত্তিক বাস্তবায়ন কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করাই সমিচীন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রসুল, হুমায়ুন কবির সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান, জতীয় কমিটির সদস্য যথাক্রমে, হাজি শেখ আনসার আলী, গওহার নঈম ওয়ারা, আশরাফুল আলম চিশতি, মোনছেফা তৃপ্তি, ফাহমিদা নাজনিনসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদি ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মূল প্রবন্ধে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বর্তমানে নগরীগুলোতে তাপমাত্রা অনুভবের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে, কারণ পরিবেশ ও প্রতিবেশের সাথে সহনশীল সহমর্মিতায় সহাবস্থানের মানসিকতার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণও তীব্রভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি, ধনী-দরিদ্র বা সামর্থ্যবান-অসামর্থ্যবানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের তীব্রতার প্রতিফলনই হচ্ছে এই অনুভবের প্রখরতা বৃদ্ধি। ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, আর প্রকারান্তরে এভাবেই অর্ধবিকলাঙ্গ একটি প্রজন্ম তৈরির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে আমাদের নগর ও নগরায়ণ। দেশের নগরীগুলোতে তাপদাহ অনুভবের এই তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হল ভুল “নগরদর্শন (Urbanism)”। ৯০’ দশকের পর নগরীগুলোতে অপরিকল্পিত, মানববিচ্ছিন্ন এবং পরিবেশবৈরী কর্মধারার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির নগরায়ণের ধারার যে বিকাশ, আজকের এই নগরীগুলোর অভিঘাতসমূহ তারই প্রকাশ।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে ২০২৪ সাল। জাতিসংঘের আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে গত এক দশকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ‘এল নিনো’র প্রভাব, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনে অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে।

সবুজায়ন ও বনায়ন প্রেক্ষিত: বাংলাদেশে বনজ সম্পদ ও বনভূমির অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। বাংলাদেশের বন বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেব মতে বাংলাদেশে বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজার হয়েছে যা বার্ষিক বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। গত সতেরো বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে। ‘রাইজিং টাইডস, রোরিং ফিউচার্স: দ্য সুন্দরবনস কোয়েস্ট ফর সারভাইভাল-২০২৪’ শীর্ষক গবেষণা মতে, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ দশকে সুন্দরবনের ঘন বনাঞ্চল ২৭ ভাগ কমেছে। ৯০ শতকের প্রায় ৩৬ শতাংশ বৃক্ষশোভিত এই মহানগরীতে বর্তমানে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গাছ রয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ (ইউএস এইড জরিপ, ২০২২) এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০ শতাংশেরও কম। অথচ একটি নগরে জনজীবনের জন্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সবুজায়ন জরুরি।

দেশের নগরীগুলোতে বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রদানকারী ও বায়ুমন্ডলে মানুষের বসবাস্য স্তরে ছায়াঘেরা ৫ থেকে ৬ গুণ শীতল পরিবেশ বা মাইক্রোক্লাইমেটে বজায় রাখার সবুজ বৃক্ষরাজির আবরণকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।

সংকটাপন্ন জলাশয় ও জলাধারগুলো: নগরীর বৃক্ষরাজীর পাশাপাশি জলাশয়-জলধারা (নীল অন্তঃসংযোগ)-কে ক্রমাগত বিলুপ্ত হতে দেয়া এবং এর “রক্ষণ ও সংরক্ষণ” (কনজারভেশন ও প্রিজারভেশন)- এই দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভারসাম্যমূলক এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিত না করাই এর মূল দায়। নগরীর খাল, জলাধার, পুকুর, জলাভূমিকে ভূমির অতি পুঁজিভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কারণে এই সকল প্রকৃতিদত্ত ঐশ্বর্য ও সম্পদ কে আমরা আগ্রাসী মনোভাবে ধ্বংস সাধন করছি এবং প্রাকৃতিগত বায়ুপ্রবাহের প্রক্রিয়াকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এঁর ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট বিশ্লেষণী গবেষণায় গত ২৮ বছরে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা থেকেই প্রায় ৮৫ ভাগ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি এই সময়ে নির্মাণ এলাকা বা স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ ভাগ অর্থাৎ সবুজ গাছপালা এবং জলাশয় ধ্বংস করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।

বৈষম্যতার তীব্রতা ও তার বহিঃপ্রকাশ: শুধামাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, পুঁজি প্রদর্শন মানসিকতা পাশাপাশি বিদেশভাবাপন্নতা তথা অনুকরণপ্রিয়তার মাধ্যমে ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থামুখিতা’ এই অবস্থা সৃষ্টিতে কার্যত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে কাঙ্খিত নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় বজায় রাখার স্বার্থে ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রা” প্রতিবেশে ছড়িয়ে দেয়ার অবিরত অন্যায় কার্যক্রম চলছে। পরিণামস্বরূপ, প্রতিবেশী হিসেবে বসবাসরত অসামর্থ্যবান বিশাল জনগোষ্ঠীর দিকে প্রায় ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি অতিরিক্ত তাপ বহমান হওয়ার কারণে ‘উত্তপ্ততার অনুভব’ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সমাজের বিত্তশালী সামর্থ্যবান আর সাধারণ্যের মধ্যে দূরত্ব এবং অসমতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাপদাহের তীব্রতার অনুভবের পার্থক্যও তাই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।

বায়ুপ্রবাহ এবং দূষণজনিত প্রেক্ষাপট: দেশের নগরীগুলতে ভবনগুলোর বিন্যস্ততায় পারস্পরিক দূরত্ব বা সেটব্যাকের মধ্য দিয়ে বাতাসের প্রবাহধারা নিশ্চিত করার যে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা ছিল তা কোনভাবেই বাস্তবায়ন করা যায়নি বললে অত্যুক্তি হবে না। ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যাই ৯৪ শতাংশেরও বেশি, এর মধ্যে অনুমোদন নেয়ার পর ব্যত্যয়কারী বা পুরোপুরি আইন লঙ্ঘনকারীরাও রয়েছে। ফলে, বাতাসের আনুভূমিক চলাচল সড়ক করিডোরের বাইরে নেই বললেই চলে। এভাবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগরীগুলোতে বিভিন্ন এলাকাসমূহ উত্তপ্ত দ্বীপের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তাপীয় দ্বীপ বা ‘হিট আইল্যান্ড’ এ রূপান্তরিত হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের যৌথভাবে পরিচালিত একটি গবেষণায় ঢাকার বাড্ডা, গুলশান, মহাখালী, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলী, বাসাবো, বাবুবাজার, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, উত্তরা, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, ফার্মগেটসহ ২৫টি স্থানকে ‘তপ্ত দ্বীপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশে বিপরীতমূখী উন্নয়ন চলছে। যা দেশ ও জনগনের জীবনের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি যশোর রোডের গাছগুলো কাটার পাঁয়তারা চলছে। এইভাবে গত বছর ধানমন্ডির সাত মসজিদ গাছগুলো কাটা হয়েছে তথাকথিক সৌন্দর্য্যবর্ধনের অজুহাতে কি উন্নয়ন হয়েছে তা জনগন দেখছে। অথচ যশোর থেকে কলকাতার রাস্তার ধারের গাছগুলো সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন আমরা যদি প্রতিজ্ঞা করে পদ্মা সেতু করতে পারি তবে প্রতিজ্ঞা করে পরিবেশ রক্ষা করতে কেন পারবো না।

অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র আজ ধ্বংসের দার প্রান্তে। সরকার দি-মূখী নীতি অনুসরণ করছে। একদিকে সবুজায়নের কথা বলে অন্যদিকে উন্নয়নের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে। এই তাপদাহের জন্য সরকার দায়ি বলে তিনি মনে করেন।

অধ্যাপক মিহির লাল শাহা বলেন, সবুজে ঘেরা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের তুলনায় অন্যান্য স্থানের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশী তারতম্য লক্ষ করা যায়। এর মূল কারণ সেসকল স্থানে বৃক্ষ না থাকা। আগামী বছরগুলোতে গরমের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২০% করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

ড. আব্দুস সালাম বলেন, দেশ ব্যাপী উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন, এসির ব্যবহার বৃদ্ধি ও দূষণ এর ফলে দেশের তাপমাত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে চল্লিশ বছরের পুরাতন যানবাহন এখন রাস্তায় চলছে যার ফলে দূষণ বৃদ্ধিসহ তাপপ্রবাহ ছড়াচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র ২৫ দিন তুলনামূলক কম দূষণের বায়ু সেবন করি। সুতরাং আর সময় না এখনই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে সবাইকে সম্মিলিতভাবে।

আলমগীর কবির বলেন, উসমানি উদ্যান, সাতমসজিদ রোড, যশোর রোডের গাছ, মাঠ ও পার্কের গাছ নিধন করে কংক্রিটের জঞ্জাল তৈরীর ফলে দেশের সবুজায়ন কমে যাচ্ছে। দেশে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে গাছগুলোকে উন্নয়নের নিচে পিষে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে তীব্র তাপদাহের সৃষ্টি হয়েছে।