ঢাকাবুধবার , ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিকট আত্মীয়ের রক্ত নেওয়া কি ভালো?

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৩, ২০২৪ ১২:২২ অপরাহ্ণ । ২১ জন

রক্তদান মানুষের জীবন রক্ষা করে। এতে একজন মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হয়। রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, রক্ত দেওয়া নিয়ে অনেকের মনে ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বাড়ে। এতে অস্থিমজ্জার রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। আবার যাদের রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য রক্তদান এক ধরনের চিকিৎসা। তবে কারা রক্ত দিতে পারবেন আর কারা পারবে না, এ নিয়ে কিছু নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।

কারা রক্ত দিতে পারেন

১. ১৮ থেকে ৬০ বছরের যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ রক্ত দান করতে পারবেন। (কোনো কোনো দেশের গাইড লাইনে ৭০ বছর পর্যন্তও অনুমোদন দেওয়া হয়)।

২. যাদের ওজন ৫০ কিলোগ্রাম কিংবা তার বেশি তারা রক্ত দিতে পারবেন। (কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪৫ কেজি পর্যন্ত গণ্য করা হয়)।

৩. কোনো ব্যক্তি একবার রক্ত দেওয়ার চার মাস পর আবার রক্ত দিতে পারেন।

কারা রক্ত দেবেন না

১. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে (পুরুষের ন্যূনতম ১২ গ্রাম/ ডে.লি, নারীদের ১১ গ্রাম/ডে.লি.), রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া উচিত নয়।

২. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের রয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।

৩. রক্তবাহিত জটিল রোগ, যেমন—ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস, এইডস, চর্মরোগ, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, টাইফয়েড ও বাতজ্বর থাকলে রক্তদান করা যায় না।

৪. যাদের চর্মরোগ রয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।

৫. নারীদের মধ্যে যারা গর্ভবতী এবং যাদের ঋতুস্রাব চলছে তারা রক্তদান করতে পারবেন না।

৬. সন্তান জন্মদানের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত রক্তদান করা উচিত নয়।

৭. যারা কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছেন, যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি তারা রক্তদান করবেন না।

৮. যাদের ছয় মাসের মধ্যে বড় কোনো অপারেশন বা বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়েছে তারা রক্তদান করতে পারবেন না।

নিকট আত্মীয়ের রক্ত- ভালো নাকি মন্দ

এটা সাধারণভাবে মনে করা হয় যে নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নিতে পারলে সেটাই বেশি ভালো। কারণ এতে রক্তের শুদ্ধতা, রক্তদাতার সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এটা একধরণের প্রচলিত ধারণা। আসলে নিকট আত্মীয়দের থেকে রক্ত নিলে ট্রান্সফিউশন অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট ভারসাস হোস্ট ডিজিজ (TA-GVHD) নামের একটি ভয়ংকর রোগের সম্ভাবনা থাকে।

এই রোগ বিরল কিন্তু অত্যন্ত ভয়ংকর। মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। নিকট আত্মীয় বলতে আপন ভাই, বোন, মাতা,পিতা বা পুত্র কন্যা যাদের মধ্যে HLA মিলে যাবার সম্ভাবনা বেশি। এতে করে শরীর দাতার T cell কে নিজের বলে ভেবে নেয়। যা পরে গ্রহীতার শরীরে বেড়ে ওঠে এবং গ্রহীতার কোষ কলাকেই ধ্বংস করতে থাকে।

অহেতুক পরিসঞ্চালন নয়

রক্ত পরিসঞ্চালন হবে শুধু জীবন রক্ষা করার জন্য। নিছক হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য নয়। অপ্রয়োজনীয় পরিসঞ্চালন নানা রকম ঝুঁকি বাড়ায়। নানারকম জীবাণু সংক্রমণ ছাড়াও আছে পরিসঞ্চালনজনিত কিছু জটিলতা। যা কোনো কোনো সময় মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

রক্ত দেওয়ার আগে কেন রক্ত দিচ্ছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বলা হয় হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রাম/ডে. লি. এর নিচে না নামলে সাধারণত রক্ত দিতে হয় না। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এই নির্দেশনার উনিশ বিশ হতে পারে। কিন্তু মূল কথা ওটাই শরীরে রক্ত নেবার আগে অন্তত দশবার ভাবুন।