ঢাকামঙ্গলবার , ১৩ আগস্ট ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিষিদ্ধ হোক ই-সিগারেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৩, ২০২৪ ৩:৩০ অপরাহ্ণ । ৫২ জন

বিশ্বজুড়ে তামাকের বিরুদ্ধে যখন একটি সাড়া জাগানো গণসচেতনতা গড়ে উঠছে, ঠিক তখনই তামাক কোম্পানিগুলোও আট-ঘাট বেঁধে নেমেছে কিভাবে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে বিকল্প উপায়ে তামাকের নেশায় বুঁদ করে রাখা যায়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেই তাদের তীক্ষ নজর। তামাকের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই বাজারে এনেছে প্রযুক্তিনির্ভর ই-সিগারেট, ভেপ, হিটেট টোব্যাকো প্রোডাক্টস। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে ১৬,০০০ ধরনের স্বাদ/গন্ধযুক্ত ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পাওয়া যায়।

বস্তুত ই-সিগারেট একটি কৃত্রিম সিগারেট যা আগুন ধরানো ছাড়াই টান দিলে ধোঁয়া বের হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিকোটিন, প্রপাইলিন, গ্লাইকল ও ভেষজ গ্লিসারিন ছাড়াও নানান ধরনের ফ্লেভার। এই ই-সিগারেট থেকে ধোঁয়া টানার সঙ্গে নিকোটিন বের হয়ে আসে যা আসক্তিকর। এই নিকোটিন অন্যান্য তামাকের নিকোটিনের মতো ক্যান্সার তৈরি করে। ই-সিগারেট যে সম্পূর্ণভাবে দূষণ বা ঝুঁকিমুক্ত তা কোনো বিজ্ঞানীই বলছেন না। এই ই-সিগারেটের ধোঁয়া থেকে যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে আসে তা অন্যান্য স্বাভাবিক তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যেও রয়েছে, তাই এর ক্ষতিকর প্রভাব আসল সিগারেটের চেয়ে কম নয়। এর বিষাক্ত পদার্থ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ই-সিগারেট নেশা উদ্দীপক এবং মাদকাসক্ত করে। এই ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহারে নিকোটিন আসক্তি জন্মায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ই-সিগারেট নিরাপদ নয়, সতর্ক করে দিয়ে যা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য খাতের বৈশ্বিক অভিভাবক ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)’। এর ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। প্রায় সকল গবেষণাতেই নেতিবাচক দিকগুলো উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, ই-সিগারেট থেকে নির্গত ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকলস ফুসফুসের কোষগুলোতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, এর হিটিং এলিমেন্ট সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষক্রিয়ার পথ সুগম হয়। এই হিটিং এলিমেন্ট একটি তরল দ্রবণকে (ই-লিকুইড বা জুস) এরোসলে রূপান্তরিত করে। এর ফলে উৎপন্ন যে বাষ্প নিশ্বাসের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে তার মধ্যে বিভিন্ন হেভি মেটাল ও ন্যানোপার্টিকলসের রূপে বিবিধ কার্সিনোজেনিক পদার্থ থাকে। এই কার্সিনোজেনিক পদার্থগুলো সরাসরি ফুসফুস, রক্ত প্রবাহ ও শরীরের অন্যান্য কোষেও আক্রমণ করে।

ফলে, রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশি। তাছাড়াও মানবদেহে ই-সিগারেটের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হলো, ই-সিগারেটের মধ্যে আছে কিছু ক্যান্সার উৎপাদনকারী ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। যেমন- ফরমাল-ডিহাইড এবং এসিটেল-ডিহাইড ইত্যাদি পদার্থ থাকে। গবেষকরা ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ই-সিগারেট কখনোই সাধারণ সিগারেটের বিকল্প স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা হতে পারে না। এবং এর সুদূরপ্রসারী ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ আরও কত বেশি হতে পারে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর! ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের শিকার হতে পারেন। যেহেতু এসকল ডিভাইস নির্ভর সিগারেটেও নিকোটিন রয়েছে, সেহেতু এর ব্যবহারকারীদের শরীরে উচ্চরক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহাীনতা তৈরি হতে পারে। যা হৃদযন্ত্রকে অকার্যকর করে দেয়।

জার্নাল অব আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ই-সিগারেটে ব্যবহৃত তরল রক্তনালীর কোষসমূহ অকার্যকর করে, যা থেকে হৃদরোগের সৃষ্টি হয়। ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে ৫৯ শতাংশ! যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক ই-সিগারেটের নিকোটিন।