ঢাকাশনিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে নাগরিক সমাজের দাবি

পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রির মধ্যে রাখতে না পারলে জলবায়ু অর্থায়ন কোনো কাজেই আসবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৬, ২০২৪ ৭:২৪ অপরাহ্ণ । ৩৭ জন

আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে আজ ঢাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, ২১০০ সালে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে গেলে সেটি আর বসবাসযোগ্য থাকবে না। আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা জলবায়ু অর্থায়নও তাই বিফলে যাবে। কাজেই, বাংলাদেশসহ সকল সরকারি প্রতিনিধি দলের মূল মনোযোগ হওয়া উচিত ২১০০ সালের বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২০১৯ সালের তুলনায় ৪২% হ্রাস করার দিকে গুরুত্ব দেয়া।

আজ (২৬ অক্টোবর) শনিবার ঢাকার তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবিডি আয়োজিত সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথিরা এ কথা বলেন।

সেমিনারটির সহআয়োজনকারী সংস্থাগুলো হলো কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিডিপি, সিপিআরডি, এওসেড, বিসিজেএফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও সিএসআরএল। ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর জনাব রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জনাব ধরিত্রী কুমার সরকার, পিকেএসএফের ড. ফজলে রাব্বি, সিপিআরডির শামসুদ্দোহা, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জনাব আহসানুল ওয়াহেদ, সিডিপির জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের জনাব আবুল হাসান। জলবায়ু সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য ও সিপিআরডির শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলো থেকে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেয়া ঋণ ও বিনিয়োগসহ সকল অর্থই জলবায়ু অর্থায়ন বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাওনা সহায়তার টাকা জাতিসংঘের মাধ্যমে না দিয়ে বিশ্বব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করায় তারা এই টাকা সহায়তার বদলে ঋণ হিসেবে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গেই ব্যবসা করছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের যে অবস্থানপত্র তৈরি হচ্ছে সেখানে আজকের আলোচনা ও সুপারিশ যুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে ১২৮টি সদস্যের সবাইকে সম্মত হতে হয়। ফলে, দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয় না।

পিকেএসএফের ড. ফজলে রাব্বি বলেন, জলবায়ু প্রশমন বা অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ধনী দেশ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের ১%-এর কম অর্থ এসেছে। আবার টাকা এলেও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ ও নীতির সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক সময় সেটা ব্যবহার করতে পারি না। এগুলো সমাধান করতে হবে।

সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, কার্বনসহ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে পৃথিবীর সমস্ত দেশ প্রশমন বিষয়ক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ৩.১% ছাড়িয়ে যাবে। সেটা হবে পৃথিবীর জন্য এক ভয়াবহ দুর্যোগ। পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য রাখতে হলে এই উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। আর সেজন্য ২০১৯ সালের কার্বন নিঃসরণের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪২% হ্রাস করতে হবে। তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের আবুল হাসান বলেন, নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের উপর কোনো শর্তারোপ না করার ব্যাপারে সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনের মূল আলোচনা হবে অর্থায়ন নিয়ে। সেই অর্থায়নকে চাহিদা-ভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত করতে হলে গ্রহিতা দেশগুলোকে বাস্তবভিত্তিক চাহিদা উপস্থাপন করতে হবে। কোস্ট ফাউন্ডেশনের সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু অর্থায়নকে ফলাফলমুখী করতে হলে এর জন্য নতুন বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে কোনো ফলাফল আসবে না। সভার সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী উপসংহারে বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের অন্তত ৭৫% জাতিসংঘের অধীন ইউএনএফসিসিসি-র মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। যত বেশি তহবিল এইএনএফসিসিসি-র বাইরে যাবে, তত বেশি এই অর্থায়ন নিয়ে বাণিজ্য হবে।