ঢাকাসোমবার , ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রাণিজগতের আয়ুষ্কাল: বৈচিত্র্যের রহস্য ও বাস্তবতা

রঞ্জন কুমার দে
ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪ ৫:০৫ অপরাহ্ণ । ৭২ জন

মৃত্যু জীবের অন্যতম একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট। জিনগত গঠন, পরিবেশগত প্রভাব, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা, প্রাকৃতিক শত্রু ও ঝুঁকি ইত্যাদি কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর গড় আয়ু নিয়ে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। সম্প্রতি কিছু প্রাণির গড় আয়ু নিয়ে World of Statistics নামক একটি প্রতিষ্ঠানে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তার উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের আয়ুষ্কালের বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

প্রাণীদের আয়ুষ্কালের বৈচিত্র্য অভূতপূর্ব। তালিকাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী থেকে শুরু করে বিশাল আকারের জীবগুলো পর্যন্ত প্রতিটির জীবনকাল একেক রকম। যেমন, ক্ষুদ্র পতঙ্গ মেফ্লাই (Mayfly)-এর আয়ু মাত্র ২৪ ঘণ্টা। এদের মধ্যে অনেক প্রজাতি এমনকি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের জীবনচক্র শেষ করে। অন্যদিকে, স্থলজ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু প্রজাতি হিসেবে পরিচিত কচ্ছপের কয়েকটি প্রজাতি, যাদের মধ্যে গ্যালাপাগোস জায়ান্ট টরটয়েজ সহজেই ১০০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে আয়ুষ্কালের বিস্তৃতি আরও বেশি। যেমন, গ্রিনল্যান্ড শার্ক (Greenland Shark) প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এটি প্রাণিজগতের দীর্ঘতম আয়ুষ্কালের একটি উদাহরণ। গ্রিনল্যান্ড শার্ক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং প্রজনন শুরু করে প্রায় ১৫০ বছর বয়সে। এর ফলে এর জীবনের গতি অন্য অনেক প্রাণীর তুলনায় অত্যন্ত ধীর। অন্যদিকে, তিমি প্রজাতির মধ্যে বো হেড হোয়েল (Bowhead Whale) ২০০ বছরের কাছাকাছি বেঁচে থাকতে পারে।

স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে, হাতি এবং কচ্ছপের দীর্ঘ আয়ু মানবজাতিকে বরাবরই মুগ্ধ করে। আফ্রিকান হাতি গড়ে ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে প্রাণিদের গড় আয়ুর এমন পার্থক্য কেন হয়?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিটি প্রাণীর আয়ুষ্কাল প্রধানত তার জিনের গঠনের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘজীবী প্রাণীদের মধ্যে কোষের গঠনের ক্ষমতা বেশি থাকে এবং তাদের কোষের বৃদ্ধির হার তুলনামূলক ধীর গতিতে হয়ে থাকে। আবার খাদ্যাভ্যাসের কারণেও আয়ুর তারতম্য ঘটে। সাধারণত শিকারী প্রাণিদের তুলনায় নিরামিষভোজী প্রাণীদের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ হয়। যেমন গ্যালাপাগোস কচ্ছপের আয়ুষ্কাল শত বছরের বেশি।

প্রতিটি প্রাণীর আয়ুষ্কাল তার জিনের গঠনের ওপর নির্ভরশীল। অনেক প্রাণীর কোষ গঠনের ক্ষমতা বেশি থাকে এবং কোষের বৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর গতিতে হয়ে থাকে। এরা দীর্ঘজীবী হয়। এছাড়াও যেসব প্রাণী দূষণমুক্ত পরিবেশে বাস করে তাদের আয়ুষ্কাল তুলনামূলক বেশি। আবার শিকারী প্রাণীদের তুলনায় নিরামিষভোজী প্রাণীদের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ হয় বলে দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্যালাপাগোস কচ্ছপের মতো নিরামিষভোজী প্রাণীরা দীর্ঘজীবী হয়। প্রাকৃতিক শত্রুর কারণেও আয়ুষ্কালের তারতম্য ঘটে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ছোট প্রাণী ও পোকামাকড়ের আয়ুষ্কাল তুলনামূলক কম। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ মৌমাছির গড় আয়ু মাত্র ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ। একইভাবে, ইঁদুরের গড় আয়ু প্রায় ২ বছর। তবে কিছু অস্বাভাবিক প্রাণীর আয়ু বেশ চমকপ্রদ। যেমন-

নেকেড মোল র‍্যাট (Naked Mole Rat): এই অদ্ভুত দেখতে প্রাণীটি প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধী এবং দীর্ঘায়ুর জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি আকর্ষণীয় ক্ষেত্র।

জেলিফিশ (Turritopsis dohrnii): এটি “অমর জেলিফিশ” নামে পরিচিত, কারণ এটি বয়স বাড়ার পরিবর্তে নিজেকে পুনর্জন্ম দিতে সক্ষম।

লবস্টার: লবস্টার প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাদের শরীরের কোষগুলোর পুনর্নবীকরণের ক্ষমতা তাদের দীর্ঘজীবী করে তোলে।

পরিবেশ দূষণ জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। বায়ু, জল, মাটি ও শব্দ দূষণ প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংস করছে, প্রজনন ব্যাহত করছে এবং খাদ্যচক্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্প বর্জ্য, প্লাস্টিক দূষণ এবং বন নিধন পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। সুরক্ষার জন্য দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।