ঢাকারবিবার , ১৪ জানুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

স্থায়িত্বশীল নগরায়ন, সমস্যা ও সমাধান বিষয়ক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৪, ২০২৪ ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ । ২৪১ জন

ঢাকায় “স্থায়িত্বশীল নগরায়ন: সমস্যা ও সমাধান” বিষয়ক এক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে গতকাল শনিবার (১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ) সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সিপিডির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে নগর গবেষণা কেন্দ্র (সিইউএস) এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বাপা সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব এর সঞ্চালনায় সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর বক্তব্য পাঠ করেন বাপা সহ-সভাপতি ও বেন-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক, আলমগীর কবির এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সম্মেলনে ড. নজরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ অর্থে নগরায়ণ হচ্ছে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে নগরীতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নত জীবন ব্যবস্থায় উত্তরণের একটি প্রক্রিয়া। সমাজবিজ্ঞানী ওয়ারেন এস. থমসনের মতে, ‘নগরায়ণ হচ্ছে কৃষি প্রধান জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশের অকৃষি কার্মকান্ড স্থানান্তর প্রক্রিয়া’। জাতিসংঘ রিপোর্টে নগরায়ণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘দেশের জনসংখ্যার একটি ক্রমবর্ধমান অংশ শহরে বসবাস করার প্রক্রিয়াই হলো নগরায়ণ।’ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গ্রাম হতে লোক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় কৃষি উৎপাদন ব্যতীত অন্য পেশা গ্রহণের সীমিত সুযোগ ও গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং পাশাপাশি জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের কারণে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শহর বা নগরাঞ্চলে বসবাস করছে এবং নগরবাসীর প্রায় ৩২ শতাংশই ঢাকায় বাস করে। রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রে সমগ্র রাজউক এলাকায় বর্তমান জনসংখ্যা ২৬ মিলিয়ন এবং জনশুমারী ২০২২ অনুযায়ী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিদ্যমান জনসংখ্যা প্রায় ১০.২৮ মিলিয়ন। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩৯.৩৫ হাজার এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩০.৪৭ হাজার মানুষ বাস করে। উল্লেখ্য যে, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে রাজধানী ঢাকা থেকে এবং দেশের প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থানের কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১,০০,০০০ বা তার বেশি জনসংখ্যাসহ নগর কেন্দ্রকে “শহর” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৩২৭টি পৌরসভা ছাড়াও ৫৭০টি নগর কেন্দ্র রয়েছে। প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে নগরায়ন সংকটের সম্মুখীন। শহরভিত্তিক উন্নয়ন ধারায় সারা দেশব্যাপী মানুষের শহর অভিমুখীতার ফলে দেশের শহরাঞ্চলগুলোর (বিশেষত রাজধানী ঢাকা) জনসংখ্যা অতিদ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ধিত এই জনসংখ্যার ভারবহনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থার কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে পরিবহন খাত। শহরের বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন হলেও রাজধানী ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, তার ৫২ শতাংশই আবার মোটরযান চলাচলের অনুপযোগী। এ কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট। নগরবাসীর বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ, বিদ্যুত, পানি, পয়নিষ্কাশন, সড়ক, পরিবহন, বাসস্থান ইত্যাদির চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়াও দেশব্যাপী ক্রমাগত দখল এবং দূষণে শহরগুলোর সবুজ ও জলজ অংশসমূহ বিলীন হয়ে পড়ছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে সিপিডির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতি নগরায়নের ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নগরায়নের ঝুঁকি বাড়ছে। সমন্ময়হীনতার কারণে দ্রুত নগরায়ন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞপ্তির ফলে দেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।