বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বয়সভিত্তিক কাঠামো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর দ্রুত বৃদ্ধির মুখোমুখি, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো তুলনামূলকভাবে তরুণ জনগণের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ২০২২ সালের “ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস” অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের গড় অনুপাত ১০% হলেও, এই হার দেশভেদে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।
উন্নত দেশগুলোতে প্রবীণ জনগণের অনুপাত অত্যন্ত বেশি, যেমন মোনাকো (৩৬%), জাপান (৩০%), ইতালি (২৪%), ফিনল্যান্ড (২৩%), এবং গ্রিস (২৩%)। এসব দেশের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, দীর্ঘায়ু এবং নিম্ন জন্মহারই এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ। স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হওয়ায় মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, আর জন্মহার কমে যাওয়ার ফলে নতুন প্রজন্মের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। নগরায়ণ এবং চাকরির বাজারের পরিবর্তনের কারণে অনেক দেশেই কম পরিবার গঠনের প্রবণতা দেখা গেছে। এর ফলে, কর্মক্ষম জনগণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করছে। প্রবীণদের যত্ন ও সেবার জন্যও বাড়তি জনবল প্রয়োজন হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশগুলোর প্রবীণ জনগণের হার যদিও উচ্চ নয়, তবুও ভবিষ্যতে তাদের জন্যও বার্ধক্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি (২২%), ফ্রান্স (২১%), যুক্তরাজ্য (১৯%), কানাডা (১৯%) এবং যুক্তরাষ্ট্র (১৭%) এখনও তরুণ কর্মক্ষম জনগণের উপস্থিতি বজায় রেখেছে, তবে এগুলোও মধ্যম স্তরের প্রবীণ জনগণের হারে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলোও জনসংখ্যার বার্ধক্যের পথে রয়েছে, বিশেষ করে চীনে এক সন্তান নীতির ফলস্বরূপ ভবিষ্যতে প্রবীণ জনগণের হার আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবীণ জনগণের অনুপাত তুলনামূলকভাবে কম, যেমন ভারত (৭%), ইন্দোনেশিয়া (৭%), পাকিস্তান (৪%), নাইজেরিয়া (৩%), সৌদি আরব (৩%) এবং আফগানিস্তান (২%)। এর কারণ হচ্ছে, এসব দেশে উচ্চ জন্মহার এবং স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা, ফলে গড় আয়ু কম। এসব দেশে প্রবীণদের জন্য একটি সুরক্ষিত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করে রাখছে।
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার বার্ধক্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, এসব দেশগুলোর জন্য সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে অভিবাসন নীতি পুনর্বিন্যাস, প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা আরও কার্যকরী ও সহজলভ্য করা এবং কর্মসংস্থানে প্রবীণদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তন করা যেতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এখন থেকেই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তারা প্রবীণদের জন্য সঠিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
এভাবে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই প্রবীণ জনগণের বৃদ্ধির ধারা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তারা একটি সুষ্ঠু এবং সুষম সমাজ গড়ে তুলতে পারে।