ইলিশ রপ্তানিতে অবদান রেখে প্রবাসীদের মতো বৈদেশি মুদ্রা অর্জনে মৎসজীবীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে মনপুরাবাসী যেমন বড় ভূমিকা পালন করে, তেমনি ইলিশ রপ্তানিতে সহযোগিতা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।’
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ চর গোয়ালিয়া আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম পরিদর্শন ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মূল কাজ হচ্ছে মাছ রক্ষা করা। প্রবাসীরা কষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে যেমনভাবে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত রাখছেন। তেমনি মাছ রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছে মাছের জন্য, বিশেষ করে ইলিশের জন্য। পৃথিবীতে কোনো দেশে এরকম ইলিশ পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়াও যায়— তা দেশের ইলিশের মতো স্বাদের হয়না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছকে প্রাকৃতিকভাবে ডিম পাড়তে দেওয়া, বড় হতে দেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ সময় আমাদের কথা জেলেরা শোনেন, কিন্তু ব্যবসায়ীরা আইন ভঙ্গ করে আপনাদের এ সময় মাছ ধরতে উৎসাহিত করে থাকেন।’ এ ধরণের খারাপ কাজ যেন কেউ না করতে পারে, সে লক্ষ্যে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মনপুরার জেলেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে পারলে পরিবর্তন আনা সম্ভব। মৎস্য কর্মকর্তারা আপনাদের সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে কথা বলে থাকেন। এমনকি ঢাকাতেও এ বিষয়ে কথা হয়ে থাকে। তারা যতই বলুক সরাসরি আপনাদের মুখ থেকে শোনা আর অন্যভাবে শোনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর এ জন্যই আপনাদের কাছে আসা।’
উপদেষ্টা বলেন, জেলেদের শুধু ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা দিলে হবে না, তাদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। জেলেদের রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হতে লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, টর্চ লাইট সরবারহ করা হবে। শুধু মাছ ধরা নয়, আপনাদের কৃষি কাজ, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এর মাধ্যমে আপনারা অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারেন।’
জেলেরা মনপুরাতে সাইক্লোন সেন্টার, নলকূপ, বিদ্যালয়সহ রাস্তাঘাটের দূরাবস্থা তুলে ধরলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের সমস্যার বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের নিকট উপস্থাপন করব। মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ জেলেদের বড় সমস্যা। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় খাল খনন করে জেলেদের দুর্ভোগ লাঘব করা হবে এবং নদী ও সাগরে ডাকাতদের দৌরাত্ম কমাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হবে।
পরে উপদেষ্টা ৮০ জেলের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট, লাইভ বয়া ও টর্চ লাইট বিতরণ করেন। দক্ষিণ চরগোয়ালিয়া আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম সংগঠন আয়োজিত মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিকের সভাপতিত্বে গ্রাম সংগঠনের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শফিউল্লাহ মাঝি।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আখতার জাহান, মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মনপুরা উপজেলার চর গোয়ালিয়া আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রামের মৎস্যজীবীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।