ঢাকাশনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ-জটিলতা মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার আহ্বান ইউনূসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ । ৫ জন

বিশ্বব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা’ মোকাবিলা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, যখন আমরা একত্রিত হই, এক হয়ে কাজ করি, তখন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমাদের থাকে। এই সম্মেলন ঠিক সেই বিষয়েই – ঐক্যের শক্তি, অভিন্ন উদ্দেশ্যের শক্তি।’

ইউনূস এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যেখানে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীরা নয়, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষ সমানভাবে ভোগ করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই আশাবাদী। আমি সবসময় সৃজনশীল ও কল্পনা শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা যদি একসঙ্গে কল্পনা করতে পারি তবে এটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। চলুন আমরা সেটি করি।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার বা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি যাই হোক না কেন, তারা এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন যা অপ্রতিরোধ্য। তিনি বলেন, ‘তারপরও বাংলাদেশে আমরা ঘুরে দাঁড়ানো, প্রতিকূলতা মোকাবিলা এবং তা থেকে সুযোগ তৈরি করার বিষয়ে কিছু জানি।’

তিনি জানান, এটি এমন একটি শিক্ষা যা তিনি কয়েক দশক আগে শিখেছিলেন গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে কাজ করে, তাদের সাহস দেখে এবং তাদের শক্তির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সমস্যারই সমাধান আছে, যদি আমাদের ধৈর্য থাকে, চেষ্টা করার সাহস থাকে এবং এগিয়ে যাওয়ার অধ্যবসায় থাকে।’

তিনি বলেন, এই অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুক্তভোগীদের সামনের সারিতে রয়েছে এবং প্রতি বছর, উপকূলীয় এলাকাবাসী ক্রমবর্ধমান জলোচ্ছ্বাস এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়। এর ফলে তাদের জীবন, ঘরবাড়ি ও জীবিকার উপর প্রভাব পড়ে।

তিনি বলেন, এটি এমন এক সমস্যা, যার সমাধানে তাৎক্ষণিক ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের প্রয়োজন। এটি এক দিনের জন্যও ফেলে রাখা যায় না। ‘একই সঙ্গে আমাদের এ এলাকা অপার সম্ভাবনাময়। আমাদের দেশ তরুণদের দেশ।’

১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি দেশকে সৃজনশীলতায় খুব শক্তিশালী করে তোলে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের তরুণদের টেকসই উন্নয়নে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, সবুজ প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরি এবং আমাদের পরিবেশের প্রচার করার ক্ষমতা রয়েছে।’ তবে এর জন্য সহযোগিতা, সাহস ও অভিন্ন ভবিষ্যতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণকারীদের কীভাবে নতুন বিশ্ব গড়া যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহিত করেন ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ গ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন জীবনধারাসহ নতুন বিশ্ব কল্পনা করার সাহস করি।’

নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, শুধু পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অতিরিক্ত সম্পদ আহরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’ তাদের থ্রি জিরো, নিট জিরো কার্বন নিঃসরণ, জিরো ওয়েলথ কনসেন্ট্রেশন-বিশ্ব তৈরি করতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সামাজিক ব্যবসা চালু করে, মুনাফা বৃদ্ধি না করে এবং শূন্য বেকারত্ব, যেখানে যুবকদের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আমরা সেটাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করি।’ আন্তর্জাতিক অতিথিদের নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানান ইউনূস। তিনি বলেন, ১০০ দিন আগে প্রায় হাজার ছাত্র ও তাদের সমর্থকরা পুরোনো সরকারের হাতে নিহত হয়েছেন এবং ২০ হাজার আহত হয়েছেন।

ইউনূস বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক সমাবেশের মাধ্যমে আসুন আমরা তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং কেউ কেউ অঙ্গ, চোখ ও বিভিন্ন শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন।’ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি দেখতে বিদেশি অতিথিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির দেশ। ‘এটি এখন আরও প্রকট, কারণ বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাগুলো মানুষের মনে এখনও তাজা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি লাখ লাখ কণ্ঠের কাজ, প্রায় সমগ্র জাতির কণ্ঠস্বর, যা পরিবর্তনের দাবি করেছে, যা আমাদের সবাইকে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে।’

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ঢাকায় শনিবার শুরু হলো আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) ২০২৪’র তৃতীয় আসর।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে পেয়ে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’

জিল্লুর রহমান বলেন, সিজিএস আয়োজিত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন এবারের সম্মেলন।

সম্মেলনে ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অংশগ্রহণকারী একত্রিত হবেন।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। বিওবিসির তৃতীয় সংস্করণের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ এ ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড’।