ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে স্পেনের পূর্বাঞ্চলে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে গত সপ্তাহে ভালেন্সিয়া প্রদেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এই দুর্যোগে ওই অঞ্চলের অন্তত ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার এর জেরে প্রবল বর্ষণে বন্যা দেখা দিয়েছে কাতালুনিয়া প্রদেশের রাজধানী বার্সেলোনায়।
সোমবার বার্সেলোনার স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অনুরোধে উত্তর-পূর্ব কাতালুনিয়ায় সব যাত্রীবাহী ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পেনের পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে।
এদিকে, বার্সেলোনার দক্ষিণ উপকণ্ঠে ‘চরম ও অব্যাহত বৃষ্টিপাতের’ সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। সতর্কবার্তায় জনসাধারণকে শুকনো গিরিখাত বা খাল এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুয়েন্তে বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বার্সেলোনা বিমানবন্দরের ১৫টি ফ্লাইটের গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতের কারণে ‘রেড সিগনাল’ জারির পর বার্সেলোনা ও ভালেন্সিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত দক্ষিণ কাতালুনিয়ার শহর তারাগোনায় সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
অপরদিকে, ভালেন্সিয়ায় বাড়ির ভেতরসহ সড়ক-মহাসড়কে ও খালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার ভাঙাচোরা গাড়ির মধ্যে লাশের সন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফের্নান্দো গ্রান্দে-মারলাস্কা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এখনও নিখোঁজদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য অনুমান দিতে পারছে না।
স্পেনের জাতীয় টেলিভিশন আরটিভিইর খবরে দেখা যায়, আলদাইয়া পৌরসভায় অর্ধশতাধিক সেনা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস-কর্মী একটি বিশাল শপিং সেন্টারের ভূগর্ভস্থ পার্কিং লটে নিখোঁজদের অনুসন্ধানে ব্যস্ত। একটি ছোট নৌকা ও স্পটলাইট নিয়ে বিশাল পার্কিং লটের মধ্যে তারা ঘুরে বেড়ান যেখানে অর্ধ ও পূর্ণ-নিমগ্ন সারি সারি যানবাহন দেখা যায়।
পুলিশের মুখপাত্র রিকার্দো গুতিয়েরেস সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি গাড়ির ভেতরে অনুসন্ধান চালিয়েও কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।
রবিবার স্পেনের রাজদম্পতি, প্রধানমন্ত্রী ও আঞ্চলিক নেতারা যখন প্রথম পাইপোর্তা সফর করেন। হঠাৎ এমন মুষলধারে বৃষ্টিপাতকে আবহাওয়াবিদরা ‘বিচ্ছিন্ন অতি-গভীর নিম্নচাপ’ বা ডিএএনএ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ স্রোত অতিক্রম করার সময় ঘটে বায়ুমণ্ডলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ডিএএনএ-র কারণে ১৯৫৭ ও ১৯৬৬ সালেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে স্পেন। সে সময়েও তুরিয়া নদী উপচে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ভালেন্সিয়া শহরকে কার্যত ধ্বংস করে দেয়।