আমরা এখন ভিক্ষুকের জাতি নয়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে প্রবেশ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন আমাদের লক্ষণ। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীরা সব সময় বন্ধু হিসেবে দেশের পাশে থেকেছেন। দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ থেকে। অভিবাসী কর্মীদের প্রেরিত অর্থের উপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়ানোর বিষয়ে সরকার আন্তরিক। প্রবাসীদের যাতায়াতে বিমানবন্দরে সদাচরণ ও নিরাপত্তা প্রদানসহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা উচিৎ। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোন দেশে কি ধরণের কর্মী দরকার সে অনুযায়ী দক্ষ কর্মী প্রেরণের উপর জোর দিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সাথে খুব দ্রুত আলোচনায় বসবো। আজ (২১ জানুয়ারি, ২০২৪ রবিবার) ঢাকার তেজগাওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে পুরস্কার প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় সরকারি বাঙলা কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতির বক্তব্যে ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান না হলে বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে যেতো। অভিবাসী শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা এখনো পর্যন্ত অভিবাসী কর্মীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারিনি। অভিযোগ রয়েছে বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো থেকে তারা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। অথচ আমাদের অভিবাসী কর্মীরা তাদের শ্রামে ঘামে অর্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করা উচিৎ। বর্তমানে প্রদত্ত রেমিটেন্সের উপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা জরুরী। যারা স্বল্প আয়ের অভিবাসী কর্মী তাদের জন্য রেমিটেন্সের উপর প্রণোদনা ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। আশাকরি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত নতুন প্রতিমন্ত্রী সংসদের প্রথম অধিবেশনে রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন। একই সাথে মাননীয় মন্ত্রী অভিবাসী কর্মীদের জন্য সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতো অভিবাসী কর্মীদের জন্য স্বল্পমূল্যে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট বরাদ্দের উদ্যোগ নেবেন। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যাশনাল বি-ইন্টিগ্রেশন পলিসি গঠনে ভূমিকা রাখবেন। বিদেশে গমনকালীন এবং দেশে আসার সময় অভিবাসী কর্মীরা যাতে বিমানবন্দরে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
জনাব কিরণ আরো বলেন,রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে সরকারের নীতি সহায়তা জরুরী। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিআইপি’র মর্যাদা দেয়ার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করলে তারা সম্মানীত বোধ করবে। অন্যান্য রপ্তানী খাত যেভাবে সুযোগ সুবিধা পায়, রিক্রুটিং এজেন্সিদেরও সেই ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো স্বল্পসুদে ঋণ, ট্রেনিং সেন্টারের জন্য জমি বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করলে দক্ষ কর্মী প্রেরণের গতি আরো বাড়ানো যাবে। তাহলে গত বছর আমরা যে ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করেছি ভবিষ্যতে তা আরো বেড়ে ৩৫-৪০ বিলিয়ন ডলার করা সম্ভব। নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে প্রেরিত কর্মীর জন্য সরকার জন প্রতি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ইনসেন্টিভ প্রদানের কথা বিবেচনায় নিতে পারে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাব, প্রমিক অসন্তোষ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা কারণে পোশাক রপ্তানী খাত সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পাট, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য থেকে রপ্তানী আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে
প্রবাসী আয়ই হবে আমাদের প্রধান ভরসা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বোয়েসেল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শুভময় দত্ত, নিমস প্রজেক্ট হেলভেটাস বাংলাদেশ এর প্রকল্প পরিচালক মো: আবুল বাসার ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পরিচালক অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ট্রফি ও সনদপত্রসহ যথাক্রমে নগদ ১ লক্ষ ও ৭৫ হাজার ও শ্রেষ্ঠবক্তাকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান বারা হয়।
ক্যাপশন-১। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দল সরকারি বাঙলা কলেজের বিতার্কিকদের ট্রফিসহ প্রবালী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণসহ অন্যান্য অতিথিদের সাথে দেখা যাচ্ছে
ক্যাপশন-২। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন সরকারি বাঙলা কলেজ ও রানারআপ প্রাইমএশিয়া ইউনিভাগিটির বিভাবিকদের ট্রফিসহ প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হালান আহমেদ চৌধুরী কিরণসহ অন্যান্যদের সাথে দেখা যাচ্ছে
ক্যাপশন-৩। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ বিভর্ক প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠবভাকে ক্রেস্ট প্রদান করছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাগান আহমেদ চৌধুরী কিরণসহ অন্যান্য অতিথিরা।