ঢাকাবুধবার , ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

রোগের রহস্য উদ্ঘাটনে নতুন আশার আলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২২, ২০২৫ ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ । ১১ জন

একবার ভাবুন, যদি আমরা জানতে পারি আমাদের দেহে রোগ কীভাবে শুরু হয় এবং সেটিকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়। লন্ডনের এক শীতল সকালে, সেখানকার একটি গবেষণা কেন্দ্রে ব্যস্ত বিজ্ঞানী টমাস মেরি। তার চারপাশে সাজানো মানুষের দেহের টিস্যু নমুনা। এই ল্যাবরেটরিতে চলছে রোগের উৎপত্তি এবং প্রতিরোধ নিয়ে এক যুগান্তকারী গবেষণা। যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এই গবেষণা প্রকল্পটির উদ্দেশ্য—মানুষের শরীরের গভীর রহস্যগুলো উন্মোচন করা এবং রোগ প্রতিরোধের নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করা।

এই গবেষণা শুরু হয়েছে ২০২৪ সালে এবং এটি পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। গবেষকরা এখানে মানুষের দেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত বিভিন্ন টিস্যু এবং স্যাম্পল নিয়ে কাজ করছেন। তারা মানুষের রক্ত, জিন, টিস্যু এবং এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করছেন। প্রতিটি স্যাম্পল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে স্ক্যান করে রোগের কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গবেষণার পদ্ধতি বেশ জটিল এবং বহুমুখী। বিজ্ঞানীরা বিশেষ স্ক্যানিং প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এবং তার দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীদের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং পারিবারিক জিনগত ইতিহাসের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ইতোমধ্যেই দৃষ্টান্তমূলক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং মানসিক রোগের মতো জটিল সমস্যাগুলোর কারণ এবং সেগুলোর সঙ্গে পরিবেশ ও জিনগত উপাদানের সম্পর্ক বোঝা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে রোগের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে কাস্টমাইজড চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে।

তবে এই বিশাল প্রকল্পে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। একদিকে যেমন বিশাল ডেটার প্রয়োজন, তেমনি ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং নৈতিক দিকগুলো নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিছু সমালোচক মনে করছেন, গবেষণার ফলাফল যদি অযথা বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি স্বাস্থ্য খাতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

গবেষণা দলের প্রধান টমাস মেরি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা মানব দেহের প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করে রোগের আসল রহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এই প্রকল্প শুধু চিকিৎসা খাতের উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যতে মানুষের জীবনধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। ভবিষ্যতে মানুষ কেবল রোগ হলে চিকিৎসা নেবে না; বরং আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর ফলে, রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

এই গবেষণা যেন এক নতুন দিনের প্রতীক। এর সাফল্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ কমিয়ে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে অবদান রাখবে। রোগের অজানা রহস্য উদ্ঘাটনের এই প্রচেষ্টা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক আশার আলো হয়ে থাকবে।