স্বাস্থ্যই সম্পদ। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমাদের খাদ্যাভ্যাস, আচরণগত অভ্যাস এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে, স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের অপর্যাপ্ত জ্ঞান ও অসচেতনতা।
অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি বরাবরই সকল বয়সের মানুষের আকর্ষণ থাকে। কিন্তু এর মধ্যে শিশু-কিশোর এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের কাঙ্খিত মুনাফা অর্জন করার লক্ষ্যে পণ্যের মোড়কের নকশা পরিবর্তন, বিভিন্ন রকমের ছাড় ঘোষণা দেয়ার মতো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এভাবেই বিভিন্ন ধরণের পণ্য তারা খুব সহজেই ক্রেতার নিকট পৌঁছে দিতে সমর্থ হচ্ছে। অথচ এধরণের অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ নানা ধরণের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।
সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মূল্যে সংগ্রহের মাধ্যমে কৃষক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি দেশে খাদ্য উৎপাদণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। কারণ উৎপাদন বৃদ্ধি হলে পণ্যের দাম কমে। এর ফলে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ন্যায্য মূল্যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজি ও ফল চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারবে। এতে যেমন আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অতিরিক্ত যান্ত্রিক যানবাহনের কারণে পরিবেশে কার্বনের-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে গাছপালা কেটে এবং বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ জটিল ও ভয়াবহ সব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা নিরসনে স্বল্প দূরত্বে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করা জরুরি। কিন্তু হেঁটে যাতায়াতের জন্য চাই পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা। দু’দিন পরপর রাস্তা কেটে সুয়ারেজ লাইন সংস্কার, জলাবদ্ধতা, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে হেঁটে যাতায়াত করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে শহরের অভ্যন্তরের বেশিরভাগ খাল-বিল, নদী এখন মৃত প্রায়। এমনকি শহরের আশে-পাশের নদীগুলোও কোথাও ময়লার ভাগার, ডোবা, ছোট ড্রেন বা নর্দমায় পরিণত হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই শহরের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে যে জলাশয়গুলো অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলোকে পুনরুদ্ধার অত্যন্ত জরুরি। ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্যের বাস্তুসংস্থান রক্ষা হবে।
যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, টিস্যু, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য ফেলা এখন দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠেছে। এসকল আচরণের পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের ব্যক্তি আচরণের পরিবর্তন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অনেক ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। এক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান (হেলথ প্রমোশন) জনসচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উল্লেখ্য যে, আমাদের আচরণই আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন।