ঢাকাবুধবার , ২০ মার্চ ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

সরকারি চাকরিজীবীদের প্রচলিত পেনশন বাদ, যুক্ত হবে সর্বজনীন পেনশনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২০, ২০২৪ ৪:০৪ অপরাহ্ণ । ৫২৪ জন

১ জুলাই ২০২৪ তারিখ ও তারপরে রাষ্ট্রায়ত্ত, স্ব-শাসিত,স্বায়িত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রাপ্তরা অবসরের পর প্রচলিত পেনশন সুবিধা পাবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য সর্বজনীন পেনশনে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করছে সরকার। আজ বুধবার ১৩ মার্চ ২০২৪ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ১৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি. তারিখে জারীকৃত এস.আর.ও. নং-৪৮-আইন/২০২৪ এর মাধ্যমে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীগণের জন্য প্রযোজ্য প্রত্যয় স্কিমের রুপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে এসকল প্রতিষ্ঠানসমূহের বিদ্যমান কর্মকর্তা/কর্মচারীগনের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন/আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুন্ন থাকবে। তবে, যাদের ন্যূনতম ১০ (দশ) বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় ০১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীগনের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কম সংখ্যক স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহে পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। এ ধরণের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীগণ আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ (Contributory Provident Fund) ব্যবস্থা প্রযোজ্য। উক্ত ব্যবস্থায় কর্মচারীগণ চাকুরি শেষে অবসর সুবিধা হিসাবে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন, কিন্তু মাসিক কোন পেনশন প্রাপ্য হন না। ফলশ্রুতিতে অবসরোত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হন। কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূলবেতনের ১০% (শতকরা দশ ভাগ) বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, যাহা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন হতে কর্তন করা হবে এবং সমপরিমান অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। অতঃপর উভয় অর্থ উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত উক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং উক্ত ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে।

বিদ্যমান সিপিএফ (Contributory Provident Fund) ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০% (শতকরা দশ ভাগ) এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮.৩৩% (আট দশমিক তিন তিন) প্রদান করে থাকে। প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে মূল বেতনের ১০% যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১.৬৭% বেশি। প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২,৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমান টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসর গমনের পর অর্থ্যাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২,৩৩০/- টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে ৩০ (ত্রিশ) বছর ধরে মাসিক ২,৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯,০০,০০০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ ৯,০০,০০০ টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মিলিয়ে সর্বমোট চাঁদার পরিমান হবে ১৮,০০,০০০/- টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তবে ১৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন ১,১২,১৯,৪০০/- টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২.৪৭ গুণ।

আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় এ পরিমান আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ হতে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে। অধিকন্তু, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হবে বিধায় চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগলব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারিত হবে। জমাকৃত চাঁদার উপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন, যা তাকে মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এক্ষেত্রে তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোন দপ্তরে যাওয়ার বা কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, প্রত্যয় স্কিমটি নতুন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আকর্ষনীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।