ঢাকাশনিবার , ১২ আগস্ট ২০২৩
  • অন্যান্য

`সিগারেট কোম্পানি গোপনে তরুণদের ই-সিগারেট সেবনে উদ্বুদ্ধ করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১২, ২০২৩ ৩:১৬ অপরাহ্ণ । ৩৭৯ জন

সরকারের ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যহত করতে সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করছে। এজন্য বিশ^বিদ্যালয়ে এম্বাসেডর নিয়োগ, রেস্টরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ তৈরীসহ নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর এই অপচেষ্টা রুখতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি আইনকে শক্তিশালী করা জরুরি। বক্তারা আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রধান অন্তরায় ‘তামাক’। দেশ থেকে তামাক সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে হবে। জনগনের স্বাস্থ্যকে রক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধূমপানের স্থান বিলুপ্ত, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ এবং খুচরা শলাকা সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে।  আজ (১২ আগস্ট, ২০২৩) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এর মেঘনা হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস আয়োজিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ: জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা’’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. মো: কামরুল ইসলাম, এমপি। মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ১০ জন সদস্যবৃন্দ। তারা হলেন- উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, ওবায়দুল মুকতাদির এমপি, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, তামান্না নুসরাত বুবলী, জিন্নাতুল বাকিয়া এমপি, সুলতানা নাদিরা এমপি, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম এমপি। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানস’র সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান তালুকদার।

দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শকএড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, মানুষের আচরণ পরিবর্তন হলে অনেক রোগ, মৃত্যু কমানো সম্ভব। দেশে মানুষ প্রতিদিন সিগারেটের পিছনে ১০৭৭ ও বিড়ির পিছনে ৩৭৭ টাকা ব্যয় করে। তামাক থেকে সরকারী কোষাগারে যা আয় হয়, তার চাইতে বেশি অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকের কারণে মৃত্যুবরণ করে। তামাক সেবন শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালকে টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ লক্ষ্যে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধনীর বিরোধীতা করছে। আমাদের দেশে তরুণদের সংখ্যা বেশি। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে গোপনে ই-সিগারেট প্রমোট, রেস্টুরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ তৈরী এবং বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। নাটক, সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের হার বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক! বিক্রয়স্থলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাত্র দুটি কোম্পানি সারা দেশে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে আইনভঙ্গ করছে।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এড. মো: কামরুল ইসলাম,  এমপি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যাতে শক্তিশালী না হয়, ট্যাক্স যাতে সঠিকভাবে আরোপ না হয় তার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে লবিং শুরু হয়েছে। বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনী চলছে। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত; তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সিএসআর কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; খুচরা ামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা; মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার ৯০ শতাংশ করার প্রস্তাবনা এসেছে, যা অত্যন্ত সময়োপোযোগী। সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে এ সংসদে গেলে যাতে পাস হয়।

বীর মুক্তিযোদ্বা প্রফেসর ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ছেলে-মেয়েরা কিশোর বয়সে ধূমপান দিয়ে শুরু করে মাদকে ধাবিত হয়ে অজস্র বাবা-মায়ের স্বপ্ন নষ্ট করছে। তামাক ও মাদকের মতো ক্ষতিকর নেশার কুফলগুলো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্বের দোহাই দিয়ে দেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, তামাকের রাজস্বের চাইতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে বেশি ব্যয় হয় তামাকের কারণে।

মানস’র প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত এর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর হেড অব প্রোগ্রামস্ মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক।