ঢাকাবুধবার , ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জোর দাবী জানিয়েছে তামাক বিরোধী সংগঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২৮, ২০২৪ ৬:৫৫ অপরাহ্ণ । ৬৩ জন

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ ইতোমধ্যেই তামাক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

আজ (২৮ আগস্ট ২০২৪) বুধবার বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি , নাটাব ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আগারগাঁও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ‘র অডিটোরিয়ামে “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সফলতা” নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও ব্যুরো এর মহাপরিচালক সাইদুর রহমান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর সমন্বয়কারী (যুগ্মসচিব), মো: আখতার উজ জামান; এনজিও ব্যুরো এর পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন ও মঈনউল ইসলাম; ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিসের সিনিয়র কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন; এইড ফাউন্ডেশন প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা, তারিকুল ইসলাম পলাশ এবং সিটিএফকে এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার, আব্দুস সালাম মিয়া অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এইড ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা।

তিনি বলেন, এইড ফাউন্ডেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় রাজশাহী ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনসহ খুলনা বিভাগের ৯টি সদর পৌরসভায় তামাক নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ১০০টি পৌরসভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। এইড ফাউন্ডেশন, ম্যাব এবং মেয়র এলাইন্স ফর হেলদি সিটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে ১০০ জন মেয়রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩টি সিটি কর্পোরেশন ও ৭০টি পৌরসভায় তামাক নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও বাড়ানো হবে। ১১টি পৌরসভায় তামাক বিক্রেতাদের লাইসেন্স ইস্যু করে রাজস্ব আয় অর্জন হয়েছে। ২২টি পৌরসভায় এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ এর আলোকে নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম টেকসই করতে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে বরাদ্দ প্রদান শুরু হয়েছে এবং দেশ জুড়ে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস- ২০২৪ পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

২০২৩ সালে জাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান (এনআইএলজি) কর্তৃক গৃহীত তামাক নিয়ন্ত্রণ মডেল কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভুক্ত ৬৬টি স্থানীয় সংগঠনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই কর্মসূচিতে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে কাজ করে এবং সংগঠনগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রশিক্ষণের পর, সংগঠনগুলো জনপ্রতিনিধিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ৫০টি স্থানীয় সংগঠন যৌথভাবে কাজ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য বাজেট বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রতিনিধি বরাবর মোট ৫ হাজার ৪৫৫টি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির প্রেক্ষিতে ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৫টি পৌরসভা নিজস্ব বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়া, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ৬ জন জনপ্রতিনিধি তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬টি বেসরকারি সংগঠনকে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেছে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টার, টকশো এবং ভিডিওর মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়। এসব কার্যক্রমের ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আরও একধাপ এগিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো এবং জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, অনেকেই তাদের সদস্যপদ এবং করণীয় সম্পর্কে সচেতন নন, যা কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিরা বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন: এনজিও ব্যুরো এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল এনজিও/বেসরকারি সংস্থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপনের মাধ্যমে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করার জন্য নির্দেশনা প্রদানের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে যে সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদেরকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের ওয়েবসাইটে নাম প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে জর্দা গুলসহ অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট তথ্য তালিকা তৈরি করার ব্যবস্থা করা। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের জন্য অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম অনুমোদন বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়, এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বস্তবায়ানের জন্য এনজিও ব্যুরো কর্তৃক সকল বেসরকারি সংগঠনকে চিঠি দেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান বাস্তবায়নে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমুহের প্রতিনিধিদের টাস্কফোর্স কমিটির সভাগুলোতে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ; তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটরিং এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজের সাথে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট/বেসরকারী সংস্থাগুলোকে যুক্ত করা; তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বিষয়টি আরো অধিক প্রচারে উদ্যোগ গ্রহণ এবং সহায়ক উপকরণ প্রকাশ ও প্রচার; তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাজেট বরাদ্দ এবং সুনির্দিষ্ট খাতে ব্যয় নিশ্চিত করা।