হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী পালন করবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি, শিক্ষাবিদ, সাম্যবাদী,মানবমুক্তির সংগ্রামী নারীনেত্রী হেনা দাসের জন্মদিন।
মানবমুক্তির সংগ্রামী নারীনেত্রী হেনা দাসের কর্মজীবন শুরু হয় মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই হেনা দাস ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রভাবিত হন। ১৯৩৮ সালে তিনি ছাত্র ফেডারেশন নামে ছাত্রসংগঠনের যোগ দেন। ১৯৪৮ – ১৯৪৯ এ তিনি নানকার আন্দোলনে মেয়েদের সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকায় শিক্ষকতা শুরু করেন এবং শিক্ষক সমিতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বহু আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে তিনি মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে যোগ দেন। ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে সভপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে হেনা দাস শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি কলকাতায় গিয়ে সকল স্তরের শিক্ষকদের নিয়ে ‘উদ্বাস্তু শিক্ষক সমিতি’ গড়ে তোলেন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তু শিবিরে ৫০ টি ক্যাম্প খুলে ত্রাণ বিতরণ, আশ্রয়, চিকিৎসাসেবা এবং শরণার্থী শিশু-কিশোরদের শিক্ষার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানে আত্মনিয়োগ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে এসে শিক্ষক নেত্রী হিসেবে তাঁর কর্মকান্ড শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে শিক্ষকদের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। সরকার এ ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং হেনা দাসকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। হেনা দাস মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য ছিলেন।তিনি তাঁর কর্মজীবনে শিক্ষা ও শিক্ষকতা জীবন’, ‘উজ্জ্বল স্মৃতি’, ‘স্মৃতিময় দিনগুলো’, ‘নারী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা’, ‘স্মৃতিময় ’৭১’ এবং ‘চার পুরুষের কাহিনী’ নামে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।
বিপ্লবী নারী নেত্রী হেনা দাস তাঁর আন্দোলনমুখী কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘রোকেয়া পদকে’ সম্মানিত হয়েছেন। এছাড়া সুনামগঞ্জ পৌরসভা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ঢাকেশ্বরী মন্দির, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, আহমেদ শরীফ ট্রাস্টসহ তিনি বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।
হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকীতে কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং সাম্যবাদে বিশ্বাসী, আজীবন বিপ্লবী এই নারীর গৌরবময় কর্মমুখী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবমুক্তির আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এবং তাঁর স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।