প্রথমবারের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়া (পিএইচএ) গ্লোবাল সামিট ২০২৪।বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে নয় দিনব্যাপী এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।সম্মেলনের মূল পর্ব আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁও হোটেল হলি ডে ইনে আয়োজিত পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪ এর সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপার্সন ডা. তাসবিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নয় দিনের এই সম্মেলনে দুই হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদ অংশগ্রহণ করবেন। স্পিকার হিসেবে থাকবেন ৫০ জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং দেশের ১০০ জনেরও বেশি খ্যাতিমান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। নয় দিনের সম্মেলনে থাকছে ৩০টির বেশি কোর্স এবং সাইন্টিফিক সেশন।
মূল সম্মেলন ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির আগে ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫টি সম্মেলন পূর্ববর্তী কোর্স অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের পরে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে আরও তিনটি কোর্স। দেশের বৃহৎ কয়েকটি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে হতে যাওয়া লাইভ সেশনগুলো দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাছে নবীন চিকিৎসকরা নানা জটিল বিষয়ে হাতে কলমে শেখার সুযোগ পাবেন।
আরও বলা হয়, ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে সামিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
ডা. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, পিএইচএ হলো বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চিকিৎসক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা সংগঠন। করোনাকালীন এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাড়ে তিন বছর ধরে সুনামের সঙ্গে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে পিএইচএ।
তিনি জানান, উপমহাদেশের বৃহৎ এই সম্মেলনের আগের পাঁচদিনে লন্ডন কোর রিভিউ, পিএএলএস, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইন অবসটেট্রিকস, রেডিওলোজি কোর্স, সিস্টেমেটিক রিভিউ অফ মেডিকেল লিটারেচার, ইন্টারন্যাশনাল করফারেন্স অন প্রেডিয়াট্রিকস, মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন, হোমোডায়ালিস কোর্স, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ফরগাট এবং পেলভিক মোটিলিটি, ব্রেস্টক্যানসার প্রিসেটরসিপ ফর ইয়াং অনকোলজিস্ট, কোর্স অন কউিনিকেশন স্কিল নিউরোরেডিওলোজি ওয়ার্কশপ, স্টাটিজিক কোর্স, মাস্টারক্লাস ইন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, আইআর ট্রোন্সপ্লান্ট হেপাটোলজি, ইনাগুরেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এসব কোর্সে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।
তিনি আরও জানান, সম্মেলনের পরবর্তী দুইদিনের বৈজ্ঞানিক সেমিনারসমূহে বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বের চিকিৎসার অগ্রগতি এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রবর্তন পর্যালোচনা এবং দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হবে। বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞদের দ্বারা কমপক্ষে ৫টি হ্যান্ডস-অন কোর্স এবং কমপক্ষে ২০টি তিন ঘণ্টাভিত্তিক সেশন হবে।
দেশের চিকিৎসাখাতে ভূমিকা রাখার জন্য এই সম্মেলন অনেক কার্যকরী হবে জানিয়ে বক্তারা বলেন, তরুণ চিকিৎসক, ইন্টার্ন এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেশন। থাকবে শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্নদের জন্য অ্যাবস্ট্রাক্ট এবং কেস উপস্থাপনা প্রতিযোগিতার সেশন। এই আয়োজনে সহায়তা করবে আইএফএমএসএ বাংলাদেশ নামক মেডিকেল সংস্থা।
বক্তারা বলেন, জৈব পরিসংখ্যান ও গবেষণা, অধ্যয়নের নকশা, কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা, কর্মজীবনের ভারসাম্য, চিকিৎসক বার্নআউট এবং চিকিৎসক সুরক্ষা সম্পর্কিত উৎসর্গীকৃত সেশন এবং কোর্সসহ চিকিৎসা প্রদর্শনী, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা নেতাদের সঙ্গে থাকছে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ। অংশগ্রহণকারীরা পেশাদার, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ পাবেন। একে অপরের অংশগ্রহণমূলক সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ল্যান্ডস্কেপে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হবে এই পিএইচএ গ্লোবাল সামিট। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, তাদের মধ্যে গবেষণা কার্যক্রম প্রচারের জন্য এটি তরুণদের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার একটি আলোকবর্তিকা হতে পারে।
এই সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন, ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন, আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি, রয়েল কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট, রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস লন্ডন, রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এডিনবার্গের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকবেন।
১০০ জনেরও বেশি বিদেশি প্রতিনিধিদের প্রত্যাশিত উপস্থিতি, অভিজ্ঞতা এবং উদ্ভাবনের বিনিময়ের জন্য বিশ্বব্যাপী সত্যিকারের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে বলে আশাবাদ জানান বক্তারা। এতে করে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণ আলোচনার গভীরতা এবং প্রশস্ততাকে বাড়িয়ে তুলবে, যা বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত উভয় সমস্যাকে মোকাবিলা করবে বলেও মনে করেন তারা।