যে সব শিশুরা মায়ের পেটে পূর্ণ সময় অতিবাহিত হবার অনেক আগেই জন্ম নেয় বা যাদের জন্ম ওজন (২.৫ কেজির কম) হয়, বা ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেয়, জন্মের পর তারা বেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায় এবং সেগুলো থেকে তাকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ কিছু বাড়তি যত্নের দরকার হয়। যেমন-
১. শিশুকে গরম রাখা: এ গ্রুপের শিশুদের অতি দ্রুততায় শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। সেজন্য মাথাসহ তার শরীর ভালভাবে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কাপড়ে মুড়িয়ে রাখার সাথে সাথে মাথায় টুপি, হাতে ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখা যায়। শিশুকে গরম রাখতে ঠিক ক্যাঙ্গারু যেভাবে তার শিশুকে পেটের নীচে থলির মধ্যে রাখে, ঠিক সেভাবে এসব ছোট শিশুগুলোকে রাখার পদ্ধতিকে বর্তমানে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাকে বলা হয় ক্যাংগারু মাদার কেয়ার, সংক্ষেপে কেএমসি)। এছাড়া নবজাতকের থাকার ঘর গরম রাখা (বিশেষ করে শীতের দিনে) দরকার হবে, হিটার ব্যবহার, দরজা জানালা বন্ধ রাখা ইত্যাদি। তবে ঘরের ভিতরে ধোয়া তৈরী হয় এরকম পদ্ধতি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
২. দ্বিতীয় জরুরি বিষয় হোল শিশুকে খাওয়ানো:
ক. প্রথমে মায়ের দুধে দেয়া এবং টেনে খেতে সাহায্য করা।
খ. শিশু যদি তা না পারে তাহলে বুকের দুধ বের করে শিশুর মাথার দিকটা উঁচু রেখে বসে বসে খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে ড্রপার বা বাটি-চামচ ব্যবহার করা যাবে।
গ. এর কোনটাতেই শিশুর খাওয়ানো সম্ভব না হলে, ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি রেখে নাক বা মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে নল ঢুকিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. খাওয়ানোর সাথে সাথে শিশু তা হজম করতে পারছে কি না তাও নজরে রাখতে হবে। যেমন অনেক সময় দেখা যায় খাওয়ানোর পর শিশুর পেট ফুলে যাচ্ছে এবং শিশু বমি করে দিচ্ছে।
৩. ৩ নং জরুরি বিষয় হলো সংক্রমণ থেকে এই শিশুদের নিরাপত্তা দেয়া। কারণ এই অপরিণত শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে খুবই নাজকু এবং একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে তার নানাবিধ জটিলতা হয়, এমনকি সে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তাই সংক্রমণ জটিলতা এড়ানোর জন্য- মা-বাবা বা শিশুর পরিচর্যার জন্য যারা নিয়োজিত থাকবেন তাদের সবার পরণের কাপড় পরিষ্কার হওয়া জরুরি। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হোল শিশুকে স্পর্শ করা বা ধরার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। অসুস্থ বা জ্বরাক্রান্ত কারও শিশুর কাছে যাওয়া ঠিক হবে না।
ক. অযথা শিশুকে কোলে রেখে আদর করার দরকার নেই।
খ. শিশুর থাকার ঘরটি রাখতে হবে পরিষ্কার ও আলো- বাতাস পূর্ণ।
গ. নিতান্ত জিনিসপত্রের প্রয়োজনীয় বাইরে বাড়তি জিনিস দিয়ে শিশুর থাকার ঘর পূর্ণ রাখা যাবে না।
ঘ. পরনের জুতা/স্যান্ডেল সব সময়ই শিশুর ঘরের বাইরে রাখতে হবে।
৪. এগুলোর বাইরে, শিশুর শরীর হয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কি না বা সংক্রমণের কোন লক্ষণ (জ্বর, বমি ইত্যাদি) বা মাথার সামনের নরম জায়গাটা ফুলে যায় কি না, তা নজরে রাখা এবং সন্দেহ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
৫. শিশুর টিকা নির্ধারিত সময়েই দিতে হবে। তবে টিকা দেয়া সময় টিকা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীর হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৬. শিশুর শারিরীক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ঠিক মত হচ্ছে কি না তা জানার জন্য হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে নিয়মিত ফলোআপে রাখতে হবে।
৭. নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে জন্ম নেয়া শিশুদের চোখের ROP পরীক্ষা জন্মের ২০-৩০ দিন বয়সের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। একই ভাবে তার শ্রবণশক্তিও পরীক্ষা করে নেয়া ভাল হবে।
নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।