দ্য ইন্টান্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ) ও বাংলাদেশ যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌরশক্তি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ২০১৬ সালে সদস্য দেশ হিসেবে যোগদানের পর বাংলাদেশ ISA-র প্রথম দিকের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম এবং এখন দুই বছরের মেয়াদে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশ।
বাংলাদেশের সৌর শক্তি বিভাগ পুনর্নবীকরণযোগ্য সৌরশক্তি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবং সোলার হোম সিস্টেম প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করছে, যা ৫০ লাখের বেশি পরিবারকে সৌরশক্তি সিস্টেম সরবরাহ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে সহায়তা করার জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IDCOL) প্রতিষ্ঠা করেছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও, পর্যাপ্ত অর্থের অভাব, অপর্যাপ্ত গ্রিড অবকাঠামো এবং সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাসহ চ্যালেঞ্জগুলি অব্যাহত রয়েছে। ISA এসব সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (MPEMR) বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কান্ট্রি পার্টনারশিপ চুক্তির মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই চুক্তির লক্ষ্য নীতি উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করা।
বাংলাদেশ ও TUVALU-র সভাপতিত্বে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ISA আঞ্চলিক কমিটির পঞ্চম বৈঠকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ISA-র লক্ষ্য সৌরশক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরে অবদান রাখা। ISA-র নয়টি বিস্তৃত প্রোগ্রাম রয়েছে যা কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন, স্টোরেজ, সবুজ হাইড্রোজেন এবং আরও অনেক বিষয় রয়েছে। পরিচ্ছন্ন শক্তি, সহযোগিতা এবং জ্ঞান ভাগাভাগির প্রসারে আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট এবং এর সদস্য দেশগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতি আমি আমার সর্বোচ্চ আস্থা প্রকাশ করছে। জীবাশ্ম জ্বালানী বর্জন করে বিকল্প শক্তি ব্যবহারের বৈশ্বিক রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির ভবিষ্যত গড়ে তোলার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।”
ISA-র Director General ড. অজয় মাথুর ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘২০১৬ সালে সদস্য দেশ হিসেবে যোগদানের পর বাংলাদেশ ISA-র প্রথম দিকের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহার এবং সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা গড়ে তোলার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করছি। স্টোরেজসহ সৌরশক্তি দ্রুত সাশ্রয়ীমূলক হয়ে উঠছে এবং বিশ্বব্যাপী বিকল্প শক্তির উৎস হিসাবে সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সৌরশক্তি প্রয়োগে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নীত করেছে, বিশেষত রুফটপ সৌরশক্তি ব্যবহারে। নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সহায়তার সাথে,
সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। এই ব্যাপারে আমরা একসাথে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে, বিনিয়োগ সংগঠিত করতে এবং সৌরশক্তি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানোর আশা করি।’
এই সহযোগিতার ছাতার নিচে বাংলাদেশ মজুতযোগ্য সৌর প্রকল্পের পাইপলাইন তৈরি এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কাজ করছে। স্টিয়ারিং নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মাধ্যমে, সৌর প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন এবং অগ্রগতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ এবং বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ প্ল্যান পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এ উল্লিখিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অংশীদারিত্ব SDG 7 (অ্যাকসেস টু এনার্জি) এবং SDG 13 (জলবায়ু পরিবর্তন) এবং প্যারিস চুক্তি, জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) সহ বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (SDG) অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়ে চিহ্নিত বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলি যেমন একাধিক অ্যাপ্লিকেশনসহ পোর্টেবল সোলার সিস্টেম, যেমন সৌর সেচ পাম্প, সৌর ধান থ্রেশার, সৌরশক্তি চালিত পানীয় জল প্ল্যান্ট এবং সৌর-চালিত ফ্লাড গেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সোলারাইজেশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সোলারাইজেশন এবং ভাসমান সোলার প্রকল্প বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে (BPMI) একটি সোলার টেকনোলজি অ্যাপ্লিকেশন রিসোর্স সেন্টার (STAR-C) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সৌর শক্তি শৃঙ্খল জুড়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এছাড়াও, ISA এবং বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয়
সৌরশক্তি রোডম্যাপ তৈরির জন্য একসাথে কাজ করছে।
ISA এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতা বাংলাদেশে সৌরশক্তি খাতে সৌরশক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করবে, নীতিমালা প্রণয়ন করবে, বিনিয়োগ সংগঠিত করবে এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় নীতির অগ্রাধিকার এবং অব্যহত উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভবিষ্যতের জন্য পরিচ্ছন্ন ও অব্যহত জ্বালানি প্রচারের জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোটের অভিন্ন অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট সম্পর্ক
ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স ১০৯টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী এনার্জি অ্যাক্সেস এবং নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং কার্বন-নিরপেক্ষ ভবিষ্যতে রূপান্তরের সুনিশ্চিত এবং প্রযোজ্য মজবুত উপায় হিসাবে সৌরশক্তি প্রচারের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারগুলির সাথে কাজ করে। ISA-র লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সৌরশক্তিতে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ সম্ভাব্য করা এবং একই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থ ব্যয় হ্রাস করা। এটি কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উত্পাদন খাতে সৌর শক্তির ব্যবহারকে উত্সাহিত করবে। ISA সদস্য দেশগুলি নীতি ও প্রবিধান প্রণয়ন, সর্বোত্তম পদ্ধতিগুলি ভাগ করে নেওয়া, সকলের গ্রহনযোগ্য নীতিগুলিতে মতৈক্যে পৌঁছানো এবং বিনিয়োগকে একত্রিত করে পরিবর্তনের দিকে চালনা করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এই কাজের মাধ্যমে, ISA সৌরশক্তি প্রকল্পগুলির জন্য নতুন ব্যবসায়িক মডেলগুলি সনাক্তকরণ এবং সেইগুলি ডিজাইন করা এবং পরীক্ষা নীরীক্ষা করছে; সদস্য দেশগুলির সরকারকে সোলার অ্যানালিটিক্স এবং পরামর্শের মাধ্যমে শক্তি আইন এবং সৌর-বান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে সহায়তা করেছে: বিভিন্ন দেশগুলিতে সৌর প্রযুক্তির বৃদ্ধি প্রপ্তির চাহিদা একত্রিত করছে, এবং খরচ হ্রাস করতে সাহায্য করছে ; ঝুঁকি হ্রাস এবং বেসরকারী বিনিয়োগের জন্য প্রকল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার মাধ্যমে অর্থের আমদানি বৃদ্ধি করা; সৌর প্রযুক্তিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য সৌর প্রশিক্ষণ, ডেটা এবং প্রযুক্তিগত ধারণা বৃদ্ধিতে প্ৰত্যক্ষ মদত
করছে।
The International Solar Alliance (ISA) ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)- র ২১ তম কনফারেন্স অফ পার্টিজ (COP 21 ) – এ গঠিত হয়েছিল এবং সৌরশক্তি দ্বারা চালিত সাশ্রয়ী এবং রূপান্তরমূলক শক্তি স্থাপনের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (MDBs), উন্নয়ন সহায়ক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (DFIS), বেসরকারী ও সরকারী সংস্থা, নাগরিক সমাজ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করছে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসমূহ (LDCs) এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশসমূহে (SIDS)।