‘পানি, নদী এবং জলবায়ু পরিবর্তন: সহিষ্ণুতার ক্ষেত্র নির্মাণ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।
নদীর অধিকার: সমন্বিত অববাহিকা ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি অধিবেশন পরিচালনা করার সময়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সাধারণ অনুশীলন রয়েছে যে প্রধান প্রধান উজানের দেশগুলি নিম্নধারার দেশগুলির সাথে আলোচনায় বসতে চায় না। বেশিরভাগ চুক্তিই হল প্রতিক্রিয়াশীল চুক্তি যা উজানের বা শক্তিশালী দেশগুলোর দ্বারা একতরফাভাবে করা হয়ে থাকে। তারা সাধারণত পানি ও নদী সংক্রান্ত বিরোধের সমাধান করতে বহুপাক্ষিক আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে থাকে। আমরা যদি দক্ষিণ এশীয় পানি ভাগাভাগি চুক্তির দিকে তাকাই, আমরা দেখতে পাই যে তাদের অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন কোন অনুশীলন আমরা দেখতে পাই না।”
তিনি আরও বলেন যে,সমস্ত নদী অববাহিকার দেশগুলোকে মতবিরোধ এড়াতে পানি বরাদ্দের একটি ন্যায্য উপায় খুঁজে বের করতে একসঙ্গে বসতে হবে এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি আঞ্চলিক কাঠামো গঠন করতে হবে।
নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম, ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন, সুইডেন দূতাবাস, পানি সম্পর্কিত আলোচনা এবং জলবায়ু ন্যায্যতার আন্দোলনে তরুণদের অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দেন। তিনি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
ডক্টর আইনুন নিশাত, প্রফেসর ইমেরিটাস, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সি৩ইআর), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বলেন, “জলবায়ু এবং পানি আলোচনার ক্ষেত্রে, রাজনীতি বোঝা অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্যভাবে খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পানি অপরিহার্য। জলবায়ু রাজনীতি ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে আমাদের জলবায়ু ন্যায্যতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।”
নদী, সহিষ্ণুতা এবং মানুষ শীর্ষক একটি অধিবেশন পরিচালনা করার সময়, ডঃ খায়রুল ইসলাম, ওয়াটারএইড, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক, বলেন, “বেশিরভাগ সভ্যতাই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। আমরা এখন নদীর অবনতি দেখছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বেশিরভাগই মনুষ্য সৃষ্ট। পানি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য উপাদান, আর আমরা একে দূষিত করেই চলছি। জনগণ সচেতন হলে আমরা এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারি। আমাদের উচিত ছিল জলাশয়কে বাঁচানোর উপায় খুঁজে বের করা”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য নেদারল্যান্ডস এ বাংলাদেশ দূতাবাস এর রাষ্ট্রদূত এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশে পানির অভাব নেই এই প্রচলিত ধারণা থেকেও আমাদের বের হয়ে আসতে হবে”।
এবছর দশটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয় এই পানি সম্মেলন- জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীর অধিকার-এর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক; জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী: ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা; উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তি এবং সহিষ্ণুতা; পানি, নদী, এবং শহুরে সহিষ্ণুতা: অবকাঠামো এবং বাস্তুতন্ত্র; নদী, সহিষ্ণুতা, এবং জনগণ; নদীর অধিকার: অববাহিকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা; বহুপাক্ষিক পানি সহযোগিতা এবং ন্যায্যতা; জীবন্ত যাদুঘর এবং স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের সহিষ্ণুতা; পানি এবং নদী: তরুণদের সম্পৃক্ততা টেকসই ভবিষ্যত: প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি।
সম্মেলনের শেষ দিনে আরও বক্তব্য রাখেন রাজমি ফারুক, এশিয়া অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ডিরেক্টর, একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল;আবদুল আলিম, হেড অব হিউমেনিটারিয়ান প্রোগ্রাম, একশনএইড বাংলাদেশ, মীর মোহাম্মদ আলী, সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; অনু দাহাল, প্রোগ্রাম অফিসার, নেপাল ওয়াটার কনজারভেশন ফাউন্ডেশন; ডঃ সুফিয়া খানম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস), সুদীপ চক্রবর্তী, সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (সি-এসএএস), ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ; এডো ব্রিকচেটি, ইকোমিউজিয়াম মার্টেসানা, ইতালি এবং কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার, (অব.) চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।