ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ মে ২০২৪
  • অন্যান্য

এত ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু আগে কখনও দেখা যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ৩০, ২০২৪ ৪:০৩ অপরাহ্ণ । ১৭২ জন

বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রোগটি আগে মৌসুমি হলেও বর্তমানে সারা বছরই এতে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর খবর চোখে পড়ছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতো, তবে এখন শীতকালেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত পাঁচ বছরের তথ্য বলছে, প্রতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে। সেই অনুযায়ী এই বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭২৬ জন এবং মারা গেছে ৩৩ জন। এই পরিসংখ্যান এযাবৎকালে প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে সর্বাধিক। অর্থাৎ এই পরিমাণ রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা আগে কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭২৬ জন এবং মারা গেছে ৩৩ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯ জন, মার্চে ৩১১ জন, এপ্রিলে ৫০৪ জন এবং মে মাসের ২৪ দিনে রোগী পাওয়া গেছে ৫১৭ জন। এ বছর জানুয়ারিতেই হাজারের বেশি রোগী পাওয়া গেছে, যা আগে কখনও পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৩৩ জন, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।

গত বছর এযাবৎকালের সর্বাধিক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তবে তখন রোগী বেশি ছিল মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে-তে ১ হাজার ৩৬ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২ হাজার ২২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; যা আগে কখনও দেখা যায়নি। আর এই পাঁচ মাসে মৃত্যু ছিল ১৩ জন।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে-তে ১৬৩ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল। আর এই সময়ে কোনও মৃত্যু ছিল না।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে-তে ৪৩ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল। আর এই সময়ে কোনও মৃত্যু ছিল না। ২০২০ সালের করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ডেঙ্গু রোগী সেভাবে পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে-তে ১৯৩ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল। এই সময়ে মৃত্যু হয় দুজনের। ২০১৯ সালের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের রেকর্ড ভাঙে ২০২৩ সালে। সেই বছর রোগী পাওয়া গিয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মারা গিয়েছিল ১৭৯ জন।

বিগত দিনগুলোর তুলনায় চলতি বছর মৃত্যুও বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে মারা গেছে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে ৫ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং ২৪ মে পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে মারা যায় ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন এবং মার্চে ও এপ্রিলে কোনও মৃত্যু ছিল না।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি। তার আগে ২০২১ সালেও জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। ২০১৯ সালের এপ্রিলে দুজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকরা বলছেন, এবার পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে নাজুক হতে পারে। সংক্রমণ ও মৃত্যু সেই পূর্বাভাস দিচ্ছে।

কীটতত্ত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত আমরা দেখেছি, মার্চ-এপ্রিলে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দু-এক মাস বাদ দিয়ে প্রায় সব মাসেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি মাসেই একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু তথা বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সম্পৃক্ত। ২০০০ সাল থেকে যদি পরিসংখ্যান দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে গত ২৩ বছরে ধীরে ধীরে ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়েছে। অথচ ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর বিত্তশালী এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। এখন কিন্তু সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। একটি জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এই রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় রোগীর ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে মৃত্যু কম হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মশা কমানো বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গত বছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। সেখানে বেশির ভাগ রোগী প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হয়েছে। এবার যদি ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হবে। আবার নতুন নতুন রোগীও আক্রান্ত হতে পারে।