ঢাকাশনিবার , ৮ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আকস্মিক পরিদর্শনে লার্ভা পাওয়ায় ১৫ লাখ টাকা জরিমানা : মেয়র আতিকুল ইসলাম

পাবলিকহেলথ ডেস্ক:
জুলাই ৮, ২০২৩ ১২:১৮ অপরাহ্ণ । ২৫৭ জন

জাপান গার্ডেন সিটির কয়েকটি বহুতল ভবনের বেইজমেন্টের মধ্যে  তিনটি ভবনের বেইজমেন্টে গিয়ে প্রতিটিতেই গাড়ি ধোয়ার পর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার অসংখ্য লার্ভা পাওয়া গেছে। জীবন্ত মশাও সেখানে ওড়াউড়ি করছিল। লার্ভা পাওয়ায় মেয়রের উপস্থিতিতে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  মাহবুব হাসান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাপান গার্ডেন সিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। একইসাথে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় পিসিকালচার হাউজিংয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে ৫ লাখ টাকা ও অন্য তিনটি ভবনে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ডিএনসিসির ম্যাজিস্ট্রেট।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক নিধন অভিযানে আমি কোথায় যাব কেউ কিছুই জানেন না। আগে থেকে জানিয়ে গেলে সেখানে সবকিছু পরিষ্কার করা থাকে। তাই প্রকৃত অবস্থা দেখতে কাউকে না জানিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আকস্মিক পরিদর্শনে যাব। এক্ষেত্রে আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব এবং ব্যবস্থা নিব বলে জানান ।

আজ শনিবার (০৮ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসির) মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযানে লার্ভা পাওয়ায় ১৭টি মামলায় মোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

শনিবার (০৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনের ভেতরে জমে থাকা পানি সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার করবে না। এসব ভবনে আমাদের কর্মীরা ঢুকতে পারে না। শুধু এই এলাকা না ঢাকার অনেক ভবনে, বাড়িতে আমাদের কর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। অন্যান্য জায়গার চেয়ে বাসা বাড়ির ভিতরে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা বেশি জন্মে। গবেষণায় উঠে এসেছে বেজমেন্টে যেখানে গাড়ি রাখা হয় ও গাড়ি ধোয়া হয় সেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ এডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই ভবনের ভিতরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ভবন মালিককেই নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাপান গার্ডেন সিটি একটি অভিজাত এলাকা। এখানে কর্তৃপক্ষ সার্ভিস চার্জ নেন। তারা ইলেকশন করেন। অথচ এখানে মশার চাষ হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যে পরিমান মশা এখানে আছে জাপান গার্ডেনের নাম চেঞ্জ করে মসকিউটু বা লার্ভা গার্ডেন রাখা দরকার। এখানে ২৩টি ভবনে কয়েক হাজার মানুষ বাস করে। অথচ প্রতিটি ভবনে যে পরিমান লার্ভা জাপান গার্ডেন সিটি একটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।’

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের আগে থেকেই আমরা মশা নিধনে মাঠে কাজ করছি৷ নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান পরিচালনা করছি। প্রচারাভিযানে বিএনসিসি ও বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্যদের যুক্ত করেছি। গত মাসে ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম ও খতিবগণের সঙ্গে এবং স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সাথে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করনীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। বাসা বাড়ির ভিতরে লার্ভার দায়িত্ব আমাদের কর্মীরা নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি মাঠে আছি, আমার সকল কাউন্সিলর মাঠে থাকবে। আমি বিভিন্ন আবাসিক এলাকার নেতৃবৃন্দ, সোসাইটির প্রতিনিধিদের আহবান করছি আপনারা নিজেদের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। সবাই সহযোগিতা করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’

জাপান গার্ডেন সিটি পরিদর্শন শেষ করে ডিএনসিসি মেয়র মোহাম্মদপুরর শেখের টেক পিসিকালচার হাউজিং, আদাবর ও শ্যামলী এলাকার কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন।

এছাড়াও অঞ্চল-১ ও ৭ এর আওতাধীন উত্তরা ৪, ৬ ও ৮ নং সেক্টর এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন অভিযান পরিচালনা করেন। উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ২টি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় দুটি মামলায় ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অঞ্চল-৯ এর আওতাধীন নুরের চালা এলাকা এবং অঞ্চল ১০ এর আওতাধীন আফতাবনগর এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল বাসেত অভিযান পরিচালনা করেন। নুরের চালায় ২টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ২টি মামলায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া আফতাবনগরে দুটি বাড়িতে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৬ এর আওতাধীন এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল বাকী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযান পরিচালনাকালে ৮টি মামলায় ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

উল্লেখ্য, ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলেই একযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। পুরো জুলাই মাসে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধন অভিযানে অংশ নেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ এ.কে.এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেঃ জেনাঃ মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অ.দা.) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, কাউন্সিলরবৃন্দ এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ মশক কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনসাধারণকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতন করেন এবং মশার উৎসস্থল ধ্বংস করেন।