জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়ে একটি চুক্তি করেছে জাতিসংঘের কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে এটিই এ ধরনের প্রথম চুক্তি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খবর-সূত্র রয়টার্স।
অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০০ দেশ দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক তর্কবিতর্ক ও আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। এরপর বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) এ লক্ষ্যে একটি চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিনিধিরা। বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করাই সর্বশেষ সেরা উপায়।
জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করার ইচ্ছা নিয়ে বিশ্ব এখন ঐক্যবদ্ধ, এ চুক্তি থেকে বিনিয়োগকারী ও নীতি প্রণেতাদের কাছে এমন শক্তিশালী একটি ইঙ্গিত যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিনগুণ করারও ডাক দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে বলছেন, জলবায়ুগত অভিঘাতগুলো প্রশমনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করাই সর্বশেষ ও সবচেয়ে জুতসই উপায়। তবে তেলনির্ভর দেশ ও শিল্পায়িত বড় দেশগুলোর নানা অজুহাতে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রথম চুক্তি করল কপ-২৮ সম্মেলন
রয়টার্স জানিয়েছে, তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার ‘ধাপে ধাপে বন্ধ করার’ বিষয়ে কপ-২৮এর চুক্তিতে কঠোর ভাষা ব্যবহার করার জন্য শতাধিত দেশ ব্যাপক তদ্বির করেছিল, কিন্তু সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল রপ্তানিকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের তীব্র বিরোধিতার মুখে তারা ছাড় দিতে বাধ্য হয়। বিশ্ব নির্দিষ্ট জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা ছাড়াই দূষণ কমাতে পারে বলে যুক্তি ওপেকের।
অন্যদিকে জলবায়ুর অভিঘাতে নাজুক দ্বীপরাষ্ট্র ও ছোট দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। আর তাতে সমর্থন জোগায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং অন্য দেশের সরকারগুলো।
মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই নিয়ে তর্কবিতর্ক চলতে থাকায় সম্মেলন বুধবারের বাড়তি সময়ে গড়ায়। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়। এখন দেশগুলোর জাতীয় নীতি ও বিনিয়োগে চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো প্রয়োগের পালা।
কপ-২৮এর সভাপতি আমিরাতের সুলতান আল জাবের এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে বলেন, এর সত্যিকার সফলতা নির্ভর করছে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস্পেন বার্থ আইদা বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে এই প্রথম সুস্পষ্ট একটি প্রস্তাবকে ঘিরে বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি একটি সমস্যা ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা এর মোকাবিলা করতে পেরেছি।’
তবে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোটের প্রধান আলোচক অ্যানি রাসমুসেন এই চুক্তিকে ‘উচ্চাভিলাষী নয়’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যখন সত্যিই নিজেদের কাজে পরিবর্তন আনতে বড় ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন, তখন উল্টো গতানুগতিক কাজেই আমাদের বেশি অগ্রগতি ঘটেছে, ঘটছে।’ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি চুক্তির বিরোধিতা করেননি।
প্রস্তাবিত এই চুক্তি বিশেষভাবে ‘শক্তি ব্যবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে আসার বিষয়ে সঠিক, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সঙ্গতভাবে’ আহ্বান জানাবে যেন ‘বিজ্ঞান নির্দেশিত পথে ২০৫০ সালের মধ্যে নিগর্মন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়’।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে বিজ্ঞান নির্দেশিত পথের সংগতি রেখে বিশ্বের জ্বালানিব্যবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে আসার বিষয়ে সঠিক, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সংগতভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিন গুণ করারও ডাক দেওয়া হয়েছে। এবার দেশগুলোর জাতীয় নীতি ও বিনিয়োগে চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের পালা।