“বাংলাদেশে মানিসক রোগের চিকিৎসা ও এর প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় বাঁধা হল এর সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বদ্ধমুল ধারণা। বিশেষত শরীর ও মনের মাঝে যে যোগসূত্র রয়েছে তা একে অন্যের পরিপুরক। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি ভাবা যায় না। শরীরে অসুখ হলে যেমন ওষুধ লাগে তেমনি মনের অসুখ হলে এর চিকিৎসাও লাগে”- ‘ ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোঃ আখতারুজ্জামান এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি গত ২৫ বছরে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অগ্রজাত্রায় সবাইকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানী তৈরিতে গুরুত্ব দেন। তাছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবার কথা উল্লেখ করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবায় যুক্ত করার উপর গুরুত্ব দেন পাশাপাশি প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানী তৈরির করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার যে চাহিদ আছে তা পুরনে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস) এর সাধারণ সম্পাদক ডঃ শাহনুর হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট পরিচালিত ২০১৮-১৯ জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের ৯২% মানুষ মানসিক রোগের কোন চিকিৎসা গ্রহণ করে না এবং ১৮.৭% প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ১২.৬% শিশু-কিশোর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত । প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৬.৭% বিসন্নতায় ও ৪.৭% উদ্বেগ জনিত সমস্যায় ভুগছেন। তিনি দেশের জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারি পেশাজীবীদের অপ্রতুলতা বিষয়টি তুলে ধরে বলেন যে দেশে প্রায় ১০০০ মনোবিজ্ঞানী রয়েছে যা পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত নয়। পেশাদার হিসেবে মনোবিজ্ঞানী তৈরি হতে অনেক বছর সময় লেগে যায় তাই কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত পেশাজীবী তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন ।
দেশে কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ও মানুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে “কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যঃ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবধান কমিয়ে আনার চাবিকাঠি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-এর লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মোঃ রোবেদ আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ডঃ মোঃ মাহবুব হাসান, এবং ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডঃ গ্রাহাম পাওয়েল। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস) এর সভাপতি ডঃ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ডঃ মোঃ মাহবুব হাসান বলেন- মানুষের বংশগতির সাথে মানসিক সমস্যার সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিস্কের অনেক কেমিক্যাল আমাদের চিন্তা ও মানসিক সমস্যায় ভুমিকা পালন করে। মনের অবস্থা শরীরে প্রভাব ফেলে এরা একে অন্নের সাথে যুক্ত। তাই মনকে বাদ দিয়ে শুধু শরীরের রোগকে গুরুত্ব দিলে চলবে না বলে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনে মানুষকে আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডঃ গ্রাহাম পাওয়েল বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সুদীর্ঘ যাত্রায় থাকতে পেরে গর্বিত বোধ করেন এবং বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি পর্যায়ে কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস) এর সভাপতি প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উপর গুরুত্ব ও মানুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে “কমিউনিটি ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যঃ বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবধান কমিয়ে আনার চাবিকাঠি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন যে, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ শুধু শিক্ষক নয় গবেষক ও পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী তৈরিতেও কাজ করে যাচ্ছে। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও এর কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের সহায়তায় কথা তুলে ধরেন। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার খরচ কমিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনে সরকারের সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুরত্ত আরোপ করেন।
উল্লেখ্য এই সম্মেলন উদযাপন উপলক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা, প্লেনারি সেশন, সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কিছু দেশি বিদেশি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হচ্ছে। সম্মেলনটি যৌথ ভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।
প্রসঙ্গত, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি ১৯৯৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা তথ্য দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে।