এবারের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১১০০কিলোমিটারের বেশি সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে এলজিইডি ও সড়ক জনপথ বিভাগ জানিয়েছে। ফলে জেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক সেতু ও কালভার্ট ভেঙে পড়েছে। বন্যার পানি যেসব এলাকায় কমতে শুরু করেছে, সেসব এলাকাতেই ভেসে উঠছে সড়কের ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র। গ্রামীণ জনপদের কাঁচা সড়ক ও রাস্তাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোথাও একেবারে বিধ্বস্ত সড়ক আবার কোথাও ধসে পড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। ইট, খোয়া, পিচ উঠে অধিকাংশ সড়কের কঙ্কাল রূপ। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের শিকারপুর-নানুয়ার বাজার সড়ক। গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে নদীর তীরবর্তী সড়কটিতে সরাসরি আঘাত হানে উজানের তীব্র ঢলে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বুরবুড়িয়া ও বেড়াজালসহ অত্যন্ত ছয় গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা। বন্যায় জেলায় এলজিইডির সড়কগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬টি কালভার্ট। কয়েকটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনো টাকার অঙ্কে নিরূপণ করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরেজমিনে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া, নানুয়ার বাজার, বেড়াজাল, ভরাসার, ইছাপুরা, কালিকাপুর, ভবানীপুর মহিষমারাসহ আশপাশের গ্রামগুলো সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। পানির তীব্র স্রোতে সড়কের পাশের বড় বড় গাছ উপড়ে গেছে। সড়কে বিশাল আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সড়কগুলোতে। এ উপজেলার কয়েকটি সড়ক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাঙ্গলকোট-বাঙ্গড্ডা-বাগমারা সড়কের অবস্থাও ভয়াবহ। মনোহরগঞ্জ-শান্তির বাজার, চিতোষী-হাসনাবাদ, তুঘুরিয়া-উত্তর হাওলাসহ লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থাই বেহাল।
বন্যাকবলিত এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সড়কের এতই বেহাল দশা যে এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগে মেরামত করে নেয়ার মত অবস্থা নেই।
এলজিইডির ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, এখন পর্যন্ত জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৭০.৬ কিলোমিটার সড়ক ও ৬টি ব্রিজ/কালভার্ট, বুড়িচংয়ে ১৫০.৯ কিলোমিটার সড়ক, আদর্শ সদর উপজেলায় ২৪.৪ কিলোমিটার সড়ক, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৭৯.২ কিলোমিটার সড়ক ও দুটি ব্রিজ/কালভার্ট, লাকসামে ১২৫.৫ কিলোমিটার সড়ক, মনোহরগঞ্জে ৭৮.৮ কিলোমিটার সড়ক, চৌদ্দগ্রামে ১৯৩.১৫ কিলোমিটার সড়ক ও ৯টি ব্রিজ/কালভার্ট, নাঙ্গলকোটে ৬৬.৬ কিলোমিটার সড়ক ও ১০টি ব্রিজ/কালভার্ট,মেঘনা উপজেলায় ২৩ কিলোমিটার সড়ক ও দুটি ব্রিজ/কালভার্ট, হোমনা উপজেলায় ৪২.৬ কিলোমিটার সড়ক ও ১টি ব্রিজ/কালভার্ট, দাউদকান্দিতে ৭ কিলোমিটার সড়ক ও একটি ব্রিজ/কালভার্ট, তিতাসে ১৯ কিলোমিটার সড়ক ও একটি ব্রিজ/কালভার্ট, মুরাদনগরে ৬.২১ কিলোমিটার সড়ক, দেবীদ্বারে ৭০.১০ কিলোমিটার সড়ক, লালমাই উপজেলায় ৫৯.৮ কিলোমিটার সড়ক, বরুড়ায় ১১৯.৭ কিলোমিটার সড়ক, চান্দিনায় ১০.৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডির কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় আমাদের বেশিরভাগ সড়ক এখনো পানির নিচে। এখন পর্যন্ত আমাদের ৯৬৮ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত আমরা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে পারছি না। পানি কমলে আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণসহ দ্রুত সড়ক মেরামতের বিষয়টি উপরের মহলে জানানো হবে।
অন্যদিকে সড়ক ও জনপথের (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বন্যায় কুমিল্লায় সওজের ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সব রাস্তা সচল আছে। যান চলাচল করছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।