ঢাকাশনিবার , ১ মার্চ ২০২৫

কুমিল্লায় রোজাদারদের জন্য বিদেশি খেজুরের সমাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১, ২০২৫ ২:২৯ অপরাহ্ণ । ৩ জন

খেজুর রোজাদারদের ইফতারের জন্য অন্যতম প্রধান একটি উপকরণ। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত, তাই রোজাদার মুসল্লিরা সর্বপ্রথম খেজুর দিয়ে ইফতার করে থাকেন। মহানবী (সা.) খেজুর খেয়ে রোজার ইফতার করতেন। নবিজি (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি খেজুর দিয়ে। যদি তিনি খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। এগুলোও যদি না পেতেন, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করে নিতেন। সেহেরিতেও খেজুর খাওয়া নবিজির সুন্নত। এ কারণে রোজাদারদের খাদ্য তালিকায় খেজুরের মর্যাদা রয়েছে।

রমজান উপলক্ষে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কুমিল্লার বাজারেও খেজুরের চাহিদা বেড়েছে। রমজান মাসে দেশের বাজারে খেজুরের চাহিদা মেটাচ্ছে নানান দেশের নানান খেজুর। বিশেষ করে সৌদি আরব, তিউনিশিয়া, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, আলজেরিয়া ও আরব আমিরাত থেকে এ খেজুর আমদানির করা হয় ।

কুমিল্লা বাজারে রমজান মাস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের খেজুর রয়েছে। খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে, তাই খেজুর পেটের হজম শক্তির জন্য খুব উপকারী একটি ফল। রক্ত স্বল্পতা ও ক্লান্তি দুর করতে খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া হৃৎপিন্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ খেজুর। কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দূর করে খেজুর।

ক্যান্সার প্রতিরোধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর একটি ভালো খাদ্য। এ ফলে থাকা আয়রন ও ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় খেজুর থেকে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে।

খেজুরের প্রকারভেদে এগুলোর দাম বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। কুমিল্লার রাজগঞ্জ, চকবাজার, রানীর বাজার, নিউমার্কেট এবং বাদশামিয়ার বাজারসহ বেশ কয়েকটি খেজুরের দোকান ঘুরে জানা যায়, খোলা বস্তার খেজুর ১৬০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ১৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মরিয়ম প্রকারভেদে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আজওয়া প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, মাবরুম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দরে, মাশরুক প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে, সাফাবি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১০০০টাকা দরে, কলমি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে, ফরিদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে, ছড়া খেজুর ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, লুলু ৪০০টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দাবাস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে, সায়ের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সুক্কারী ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, জেহাদি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এবং বস্তার খেজুর ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খেজুরের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবারের রমজানের চেয়ে খেজুরের দাম বাড়েনি। এ বছর আমদানি বেশি হওয়ার কারণে খেজুরের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে।
চকবাজারের মামনুন স্টোর ও সুমন স্টোরের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের খেজুর রাখেন এবং পাইকারি দামে অল্প মুনাফায় খেজুর বিক্রি করে থাকেন।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, বাজারে যেন পচা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ খেজুর বিক্রি না করতে পারে, সেজন্য আমরা আজ থেকে অভিযান পরিচালনা করব। রমজান মাসে ভোক্তারা যেন ভালো খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পারে, এ জন্য পুরো রমজান মাসব্যাপী আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, জেলা প্রশাসনের অধীনে আমরা রমজান মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব। যাতে করে মানুষ সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার ও সেহেরিতে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে পারেন। আমরা খেজুরের প্যাকেট ও বস্তার উৎপাদন তারিখ দেখি, যাতে করে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের খারাপ মানের খেজুর দিতে না পারে।