ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • অন্যান্য

কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের বেশিরভাগ নদ-নদী মৃতপ্রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২১, ২০২৪ ১:৩৩ অপরাহ্ণ । ৭ জন

উৎসমুখে বাঁধ, নদীর পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি, শিল্প কারখানার দূষণ এবং খনন না হওয়াসহ নানা কারণে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার অধিকাংশ নদ-নদী এখন মৃতপ্রায়। ভারতের দেয়া ফারাক্কা বাঁধের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এগুলোর পানিপ্রবাহ। ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জেলেদের জীবিকার পথও কমে আসছে। আর নদীগুলো বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগ কেবল পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।

পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গা নদীতে। এ অঞ্চলে নদীর তীরঘেঁষে রয়েছে সড়ক ও রেলপথ; গড়ে ওঠেছে নানা অবৈধ স্থাপনা। এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে কুমার নদের ওপর। শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ এলাকার ত্রিমোহনী এক সময় খরস্রোতা থাকলওে এখন নদীর বুকে করা হচ্ছে চাষাবাদ, চরানো হচ্ছে গরু।

চুয়াডাঙ্গায় উৎসমুখ বন্ধ থাকায় শুকিয়ে খাল হয়ে গেছে নবগঙ্গা। ভরাট আর দখল হয়ে যাওয়ায় দিন দিন অস্তিত্ব হারাচ্ছে এ অঞ্চলের অন্তত ২০টি নদ-নদী। পলির অব্যবস্থাপনার কারণে নদীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। ফলে এসব অঞ্চলে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না, আর আয় কমে গেছে মৎস্যজীবীদের।

এদিকে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা ভৈরব নদ অনেকটাই পরিণত হয়েছে মরা খালে। এ নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় জাহাজের মাধ্যমে বণিকরা ব্যবসা করতেন এ অঞ্চলে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে গেছে নদীকেন্দ্রীক বাণিজ্যও।

এদিকে, নাব্যতা ফেরাতে এসব নদীতে বিভিন্ন সময়ে পাউবো কোটি টাকা খরচ করে খনন কাজ করলেও বছর না ঘুরতেই আবারও ভরাট হয়ে যায় বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। শুধু খনন নয়, নদী বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বাঁধ নির্মাণ এবং সব নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এসব নদীর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে বলে আসছি। কোন সমাধান হয় না। কখনও কখনও ছোট ছোট আকারে খনন প্রকল্প নেয়া হয়, সেখানে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বছর না ঘুরতেই আবারও নদী শুকিয়ে যায়।’

এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, উজান থেকে পানি আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ফারাক্কা বাঁধ সমস্যার মূল কারণ। আন্তর্জাতিকভাবে এটি সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আর খননে পাউবো বরাবরের মতো পরিকল্পনার কথায় জানায়।

কুষ্টিয়া পাউবোর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এসব নদীর সমস্যা সমাধানে আমাদের নিয়মিত উদ্যোগ রয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আমরা তালিকা তৈরি করেছি। রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে।’