ঢাকাশুক্রবার , ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এফএও’র সম্মেলনে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪ ২:৪৫ অপরাহ্ণ । ১৩৩ জন

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিনিয়র লেভেল অফিসার্স মিটিংয়ে (এসওএম) বাংলাদেশ ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৪৬ টি সদস্য রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এসওএম ফোরাম গঠিত হয়, যেখানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মহামারী, জলবায়ু জরুরী অবস্থা, অস্থিতিশীল বাজার এবং অর্থনীতিতে ক্ষতিগ্রস্থ লক্ষ উৎপাদক এবং ভোক্তাদের জন্য কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

শ্রীলঙ্কান সরকার আয়োজিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক সম্মেলন (#এপিআরসি৩৭) এর উদ্যোগ গ্রহণ করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

উক্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব। এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলটিকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।

বাংলাদেশের এফএও প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি বলেন, “এফএও বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনকে সমর্থন করতে অংশীদারদের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে দেশের উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এফএও-এর কার্যক্রমে নির্দেশনা প্রদানে সাহায্য করবে, সকল এফএও সদস্য দেশ ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশেষ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে।”

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৪৬ টি এফএও সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিং (৩১ জানুয়ারী থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ – ভার্চুয়ালি), এবং মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে (১৯ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪- সরাসরি) অংশগ্রহণের জন্য উচ্চ-পর্যায়ের শত শত অংশগ্রহণকারীরা নিবন্ধন করছেন। এফএও মহাপরিচালক, ড. কু ডংইউ, মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে যোগ দিতে এফএও সদর দপ্তর, রোম থেকে যাত্রা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সমাবেশ
আলোচনার বেশিরভাগ বিষয়ই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এই অঞ্চলের অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, যেমন উপরোক্ত সঙ্কটে প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে ভবিষ্যৎ খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা, দারিদ্র্য হ্রাস ও আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ এবং অর্থায়ন, পানি ও খাদ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, এবং ক্ষতি ও অপচয় হ্রাস।

স্থিতিস্থাপকতা একটি মূল বিষয়। একটি বিশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের অনুষ্ঠান বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ক্ষেত্রগুলিতে ফোকাস করবে, যেমন আধুনিকায়ন এবং জলজ চাষ ও প্রাণিসম্পদের ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য ডিজিটালাইজেশন, সেই সাথে বিশাল অঞ্চল জুড়ে থাকা দেশগুলিতে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক রূপান্তর।

বাংলাদেশের জন্য প্রধান অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রগুলি হচ্ছে অর্থনৈতিক রূপান্তর – আরও টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি ত্বরান্বিত পরিবর্তন, কৃষি খাতে খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে উপযুক্ত চাকরি ও জীবিকার জন্য বর্ধিত এবং ন্যায়সঙ্গত সুযোগ সৃষ্টি। স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য মানুষের সামর্থ্য এবং সামাজিক বিকাশের উপর জোর দেয়, সেই সাথে ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষাদান এবং শিক্ষালাভ, শিশু এবং যুব সুরক্ষা, অভিবাসন পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরে।

জলবায়ু সহনশীল এবং প্রাকৃতিক কম-কার্বন সম্পন্ন টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে – জলবায়ু পরিবর্তনের সহনশীলতা এবং অভিযোজন ত্বরান্বিত করা; খাদ্য ও কৃষির জন্য জীববৈচিত্র্য এবং ইকোসিস্টেম সেবা সংরক্ষণ; প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পানি ব্যবস্থাপনা; এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশগত রূপান্তর, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাসের উপর জোর দেয়া হয়েছে। অবশেষে, লিঙ্গ সমতা এবং যুব উন্নয়ন একটি ক্রস-কাটিং স্তম্ভ যা কাঠামোগত এবং আন্তঃক্ষেত্রীয় অসমতার সমাধান করে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তোলে যেখানে নারী, মেয়ে, সংখ্যালঘু এবং যুবকরা বৈষম্যমুক্ত জীবনযাপন করে।

৩৭তম এপিআরসি-এর আগে, ডিসেম্বর ২০২৩-এ একটি কান্ট্রি কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা এপিআরসি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করেন এবং কিছু সুপারিশ প্রস্তুত করেন। বিগত এক দশকের ভিতর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ এবং বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে। “বাংলাদেশ থার্ড কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান – সাস্টেইনেবল নিউট্রিশন সেনসিটিভ এন্ড রেজিলিয়েন্ট ফুড সিস্টেম” (সিআইপি৩, ২০২১-২৫) অনুসারে, দক্ষ এবং পুষ্টি-সংবেদনশীল ফলন-পরবর্তী রূপান্তর এবং মূল্য সংযোজনের উপর বিনিয়োগ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য চিহ্নিত অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলোকে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন এবং বাণিজ্যিকীকরণ; বিশেষায়িত, বহুমুখী কোল্ড স্টোরেজ, ফসলোত্তর ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা; জলবায়ু স্মার্ট কৃষি; এবং সেচ ও জল ব্যবস্থাপনা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।