ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

বাড়ছে ব্যক্তি-পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যয়

চাই সবার জন্যে স্বাস্থ্যবীমা

পাবলিকহেলথ ডেস্ক
নভেম্বর ১৬, ২০২৩ ৪:৫৭ অপরাহ্ণ । ৩৪৫ জন

স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাংলাদেশে একটি যথাযথ স্বাস্থ্য-বীমা পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি বা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু করা হয়নি। হঠাৎ পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে আমরা বিপদে পড়ে যাই। খরচ যোগানের জন্যে দৌড়-ঝাঁপ করতে হয়। যদিও আমাদের সংসার পরিচালনার জন্যে বাজেট থাকে, উৎসবের বাজেট থাকে, সন্তানের শিক্ষা-ব্যয়ের বাজেট থাকে। কারো কারো বেড়ানোর বাজেটও থাকে। কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে কোনো আলাদা বাজেট থাকে না।

কিন্তু সর্বজনীন স্বাস্থ্য-বীমা যদি থাকত, যেমটা পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে আছে, তাহলে সেটা আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে আসত। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য-বীমা দূরে থাক, সাধারণভাবেও স্বাস্থ্য-বীমার সংস্কৃতি নেই। এর বিপরীতের চিত্রটি হচ্ছে প্রতিবছর দেশের মানুষেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চিকিৎসার জন্যে ব্যয় করতে হয়।

নাগরিকের চিকিৎসার জন্যে সরকারের একটা ব্যয়-বরাদ্দ আছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের জন্য গড়ে মাথাপিছু ব্যয় হয় চার হাজার ৫৭৮ টাকা। আর বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৮.৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ব্যক্তির নিজ খরচে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের ওওপি ছিল ৭৪ শতাংশ। ২০১২ সালে বাড়তি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬৩ শতাংশ।

সরকারের নির্দিষ্ট বরাদ্দের বাইরে সেবাগ্রহীতা নিজ পকেট থেকে যে অর্থ ব্যয় করেন, সেটাকেই ‘আউট অব পকেট পেমেন্ট- ওওপি’, বাংলায় ‘নিজের পকেট থেকে করা খরচ’ বা বাড়তি খরচ বলা হয়। বাংলাদেশে এ খরচ দিন দিন বাড়ছে। আর যতদিন পর্যন্ত না দেশে কার্যকর স্বাস্থ্য-বীমা চালু করা যাবে, ততদিন এ খরচ বাড়তেই থাকবে।

যদিও ২০১২ সালে স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার ২০৩২ সালের মধ্যে রোগীর নিজের পকেট থেকে দেওয়া চিকিৎসা খরচ (ওওপি) ৩২ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১ দশক। কিন্তু রোগীদের ওপর খরচের বোঝা কমার বদলে শুধু বেড়েই যাচ্ছে।

২০২১ সালে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উচ্চ মাত্রার ওওপির জন্য মূলত ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিই দায়ী। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক বিপণন কৌশলকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দ্বিতীয় মূল কারণ হিসেবে রোগ নির্ণয়ের খরচকে চিহ্নিত করা হয়।

বছর বছর মোট স্বাস্থ্য-ব্যয়ে সরকারের ভাগ কমে আসার এবং ব্যক্তির ভাগ বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। তাদের পরিসংখ্যান বলছে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাস্থ্য-ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমছে। আবার ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ চিকিৎসা করাতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়ছে। তবে এই ধারা শুধু তিন বছরের নয়। দুই দশকের বেশি সময় ধরেই এমনটা চলছে।

চিকিৎসাসেবায় বিশ্বের মডেল কিউবা। সে-দেশে স্বাস্থ্য-বীমা নাগরিকের চিকিৎসার শতভাগ খরচ বহন করে। যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য-বীমা ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ বহন করে।, বাকিটা বহন করতে হয় রোগীকে। সম্প্রতি ভারতে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ নামে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আছে আরোগ্যশ্রী স্কিম।