ঢাকাশুক্রবার , ১৪ জুলাই ২০২৩
  • অন্যান্য

চিকিৎসায় মৃত্যু ও ফৌজদারি অপরাধের পার্থক্য

ডা. সুশান্ত বড়ুুয়া
জুলাই ১৪, ২০২৩ ৪:১৫ অপরাহ্ণ । ৩৩৫ জন

১.

চিকিৎসায় মৃত্যু কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়। চিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ ঘটনা। চিকিৎসায় ভুল হওয়াও স্বাভাবিক এবং এটা প্রফেশনাল হ্যাজার্ড। পৃথিবীর কোনো কর্মই ভুল ত্রুটি র উর্ধ্বে নয়। সেজন্য চিকিৎসা শাস্ত্রীয় আইনে ভুল হলে শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এই বিধান রাখা হলে – এই ঝুকিঁ পূর্ণ পেশায় লোক ও খোঁজে পাওয়া যেত না। সেবা কর্মে জেল জরিমানা হলে কেউ উৎসাহিত হবে না – এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ, ইদানীং চিকিৎসা সেবা বানিজ্যে পরিনত হয়েছে। সেটা আলাদা আলোচনা।

সরকারি -বেসরকারি যেখানেই হোক, চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুলের কোনো ফৌজদারি মামলার বিধান নেই। এক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা করতে গেলে, আগে বিএমডিসি র ধারস্থ হতে হবে এবং বিএমডিসি র অনুমোদন লাগবে। সেবা গ্রহীতাকে আগে প্রমাণ করে দেখাতে হবে, চিকিৎসক ইচ্ছাকৃত ভুল করেছেন যা ফৌজদারি অপরাধে পর্যায়ে পড়ে । তবেই তিনি একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারেন। এর আগে করার বিধান নেই। কারণ একজন নন-মেডিক্যাল ব্যাক্তির বুঝার কোন সাধ্য নাই চিকিৎসা কার্যে আসলেই ইচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে নাকি অনিচ্ছাকৃত হয়েছে। এটা প্রাথমিকভাবে যাচাই করবে বিএমডিসি। ওখানে যদি বেরিয়ে আসে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অবহেলা হয়েছে তবে বিএমডিসি নিজেই শাস্তির সুপারিশ করবে। এই হলো চিকিৎসা শাস্ত্রে ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনার নিয়ম এবং ফৌজদারি মামলা হবার পূর্ব শর্ত।

ইদানীং হুটহাট করে যেকোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে আদালত এই মামলা গ্রহণ করছে এবং তার ভিত্তিতে যে বাহিনী গ্রেফতার করছে- দুটোই বেআইনি। এসব ঘটনায় উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।

চলমান ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, সাধারণ লোক দূরের কথা স্বয়ং আইনী প্রতিষ্ঠান গুলোও চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতায় কিভাবে আইন প্রয়োগ করতে হয় জানে না।

এই অজ্ঞতার বলি চিকিৎসক কোনো হতে যাবে?
চিকিৎসা সংক্রান্ত অপরাধ কিভাবে আইনের আওতায় পড়ে – সেই বডি ও বা নীরব কোনো? বা চিকিৎসক পেশার এসোসিয়েশন, বিএমএ ও বা কোনো কেবল প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে, আইনী প্রক্রিয়ায় না হেঁটে? তারা কি আইন কানুন ভুলে গেছেন? জানা আইন রাজপথে নেমে না আওড়ে ভুক্তভুগী চিকিৎসককে জেল হাজত থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া আরম্ভ করতে বিলম্ব করছে কেন? এই দায় কি এসব বডি এড়াতে পারে?

আর জনগণ অসচেতন হয়ে যেসব জায়গায় হামলা মামলার দিকে যাচ্ছে – তাকে থামাতে ও সাংগঠনিক পরিকল্পনা নেয়া দরকার । প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ও হাতে নেওয়া উচিত। চিকিৎসকরা যেনো নির্ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়ে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই পেশায় মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না।

২.
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কখন ফৌজদারি আইন কার্যকর? চিকিৎসকরা যদি চিকিৎসা সেবার বাইরে যেয়ে অন্য কোন অপরাধ সংঘটিত করে বা যুক্ত থাকে, তবেই কেবল তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায়। এর আগে কোনোভাবেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে না।

৩.
সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি আদালতে গেলে করণীয় কি? আদালতের উচিত সোজা বিএমডিসিকে রেফার করা। বিএমডিসি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এটিকে ইগনোর করা অন্ততঃ আদালতের উচিত নয়। সাধারণ মানুষ নাও জানতে পারে। কিন্তু আদালত জানবে না কেন? আদালতের অজানা থাকলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। খেসারত দিতে হবে আমাদের সবাইকে।

উপরে আলোচিত দিকগুলো যথাযথ অনুসৃত না হলে চিকিৎসক এবং জনগণ মুখোমুখি হতেই থাকবে। এদেশে চিকিৎসকদের সন্মান শ্রদ্ধা কমতে থাকবে। পাবলিক সেন্টিমেন্টই বিচারের মাপকাঠি হয়ে যাবে।

#[বেআইনিভাবে গ্রেফতার ডাঃ মুনা, ডাঃ শাহজাদী সুলতানার মুক্তি দিন;মামলাকারী এবং গ্রেফতার তামিলকারীর শাস্তি দিন]#