ঢাকাশনিবার , ২৯ জুন ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধিসহ ১৩ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৯, ২০২৪ ২:৪৯ অপরাহ্ণ । ১৪৪ জন

দেশে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কার্যকরভাবে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সকল তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য যৌক্তিক বৃদ্ধি করা আবস্যক। তাই ঢাবির অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর মতবিনিময় সভা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধিসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর)। শনিবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই সুপারিশ করা হয়।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও হামিদুল ইসলাম হিল্লোলের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোবাকো ট্যাক্স পলিসির মেম্বার বজলুর রহমান।

সভায় মূল প্রবন্ধে রুমানা হক বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার বৃদ্ধি করে এটিকে মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে নেওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কিশোর-তরুণদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মূল্য কিশোর-তরুণদের তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। গবেষণায় দেখা যায় ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে এর ব্যবহার কমবে ৭.১ শতাংশ।

তিনি বলেন, এবারের বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রস্তাবে সিগারেটের চারটি স্তরেই একই সঙ্গে মূল্য ও করহার বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সিগারেট ও বিড়ির কাগজের ওপর আমদানি শুল্ক ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মূল্য কাঙ্খিত পরিমাণ না বাড়লেও মধ্যম, উচ্চ ও অতি-উচ্চ স্তরে সিগারেটের কর হার বেড়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। একই সঙ্গে সব সিগারেটের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, প্রতি শলাকা খুচরা পয়সার ঝামেলা মুক্ত হয়েছে। একক শলাকার মূল্যে খুচরা পয়সা থাকলে বিক্রেতারা খুচরা অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করে। এতে তামাক ব্যবহারকারীরা বেশি দামে কিনলেও, বর্ধিত মূল্য থেকে সরকার কোন রাজস্ব পায় না কিন্তু ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি পায়।

সিগারেট ও বিড়ির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ব্যপারে ড. রুমানা বলেন, এবারের বাজেটে আরও একটি ইতিবাচক দিক হলো বিড়ি, জর্দা ও গুলের ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের আইন অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর সরকার ট্যাক্স আদায় করে থাকে।

তামাক কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যের ব্যপারে তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় বাধা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। তামাক কোম্পানি যেহেতু, বেশি দামে পণ্য বেচে বিপুল অবৈধ মুনাফা অর্জন করে, সেহেতু তারা দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করে। কিন্তু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সে পথ বন্ধ করা হলে তামাক কোম্পানিই মূল্য বৃদ্ধির কথা বলবে। দেশে ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে। এবারের বাজেটে নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্য ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির হার ১১.১শতাংশ।

এ সময় মতবিনিময় সভায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১৩ টি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো- সব তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য যৌক্তিক পরিমাণ বৃদ্ধি করা, নিম্নস্তরে সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুসারে ৬৩ শতাংশ নির্ধারণ করা, সিগারেটের স্তরসমূহ এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরণের তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনা, সিগারেটের স্তরসমূহ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে একটিতে নিয়ে আসা, অ্যাড ভেলোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতির প্রচলন, সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা ও মনিটরিং জোরদার করা। এর জন্য বেসরকারি সংগঠনসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা, মনিটরিংয়ের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করা, নিয়ম অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা ও কর প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। তামাক কোম্পানি থেকে সরকাররে অংশীদারত্ব প্রত্যাহার করা, বিকল্প রাজস্ব উৎসের সন্ধান করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালি তামাক কর নীতি গ্রহণ, কার্বনেটেড বেভারেজ, সুইটেনড বেভারেজ, অ্যালকোহলসহ সব স্বাস্থ্য হানিকর খাদ্য ও পানীয়ের ওপর উচ্চহারে করারোপ।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। এরপর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন টোবাকো কন্ট্রোল রিসার্চার ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা, দ্যা ইউনিয়নের সিনিয়র টেকনিক্যাল উপদেষ্টা এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং বাংলাদেশ এন্টি টোবাকো এলায়েন্স এর কো-অর্ডিনেটর সাইফুদ্দিন আহমদ।