বিশ্বব্যাপী দাবদাহের কারণে হচ্ছে হিট স্ট্রেস তথা তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতা। দাবানলের ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়াচ্ছে মশাবাহিত রোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কীভাবে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এগুলো তার সামান্য নমুনা। এই প্রথম জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে কপ-২৮ সম্মেলন শুরু হয়। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনস্বাস্থ্যের প্রতি সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা আলোচনা করছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক দশকের অর্জনকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, পুষ্টিহীনতা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতায় ২০৩০ সালের পর থেকে বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ম্যালেরিয়া নো মোর (আর নয় ম্যালেরিয়া) নামের একটি অলাভজনক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্টিন এডলুন্ড বলেছেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সম্মেলনে উঠে এসেছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ওয়েস্ট নাইল (ভাইরাসজনিত জ্বর), জিকাসহ মশাবাহিত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস নতুন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়াচ্ছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও ভারী বৃষ্টি মশার প্রজনন বাড়াতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে বিশ্বে শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। এই সংখ্যা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ৫০ লাখে।
এডলুন্ড বলেন, পাঁচ বছরের গড় হিসাবের তুলনায় শুধু চলতি বছরে ব্রাজিলে ডেঙ্গু রোগী ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এ বছর রেকর্ড গড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন অকল্পনীয় প্রভাব ফেলেছে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবেও। ২০২২ সালে আগের বছরের চেয়ে ৫০ লাখ বেশি ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছর বন্যার পর পাকিস্তানে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৪০০ গুণ বেড়েছে বলে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় ও বন্যার প্রকোপ বাড়তে থাকায় পানিবাহিত রোগও ছড়াচ্ছে। খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ কলেরা প্রতিরোধে কয়েক দশকের অর্জন হুমকির মুখে। রোগটি তাড়াতে সক্ষম হয়েছিল এমন দেশেও নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা না নিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
গত বছর ৪৪টি দেশে কলেরা রোগী বেড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা গত বছর ২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পাশাপাশি খরার কারণে সুপেয় পানি না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।