বিরল মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অপারেশন-পরবর্তী ফলোআপের জন্য ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এবং হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক দল ঢাকা সিএমএইচে যান। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ওই অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ নিয়ে গতকাল (২৮ এপ্রিল) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মাথা জোড়া লাগানো যমজ সন্তান। যাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ক্রানিওপাগুস টুইটনস’। মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন জীবিত যমজ শিশুর মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরো এক-তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। আনুমানিক শতকরা ২৫ ভাগ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে, যাদের শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু এর সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ বিরল অপারেশনটি প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী সিএমএইচে সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বে ১৭তম নজির।
অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে জটিল অংশ যমজ মস্তিষ্ক আলাদাকরণে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৩ মার্চ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটব্যাপী দুটি অপারেশন সিএমএইচ ঢাকায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এ অপারেশন দুটির মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দ্বারা পূর্ণ করা হয়। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ার ক্ষত শুরু হয় এবং পরে বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়। এ জটিলতা সমাধানের নিমিত্তে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২০২২ সালের ৭ মার্চ ক্রানিওপ্লাস্টি সার্জারির মাধ্যমে সিএমএইচ ঢাকায় একটি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দুজনই সুস্থ আছে। ওই অপারেশনে দেশী ও বিদেশী শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।