ঢাকাশুক্রবার , ১০ মে ২০২৪
  • অন্যান্য

টিকাদান কর্মসূচীকে শতভাগ সফল করার আশাবাদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী’র

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১০, ২০২৪ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ । ৯৪ জন

সংসদ সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টিকাদান কর্মসূচীকে শতভাগ সফল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন।

গত বুধবার (৮ মে) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং এর আয়োজনে এবং ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের কৌশলগত অংশীদারিত্বে “High Level Meeting for Strengthening Immunization Program Towards Achieving Universal Health Coverage in Bangladesh” শীর্ষক সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে মাতৃ-মৃত্যু, শিশু-মৃত্যু এবং টিকাদান কার্যক্রমে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রতিটি শিশুর জন্য টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করনে অঙ্গিকারবদ্ধ। ইতিমধ্যে টিকাদান কার্যক্রমের সফলতা হেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘‘ভ্যাকসিন হিরো”সন্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এই টিকা কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করার জন্য একদল পরিশ্রমী কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমরা জানি এই জনবল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শীঘ্রই জনবল বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা একইসাথে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অব্যাহত সমর্থন ও ভূমিকা রেখে চলার জন্য ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে গ্যাভীর সিএসও’র ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে, বাংলাদেশের টিকাদান সাফল্যও বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। টিকাদান কার্যক্রমের সফলতার পাশাপাশি আমরা অনেক জায়গায় পিছিয়ে আছি। যার মূল কারন টিকাদান কার্যক্রমের সাথে জড়িত জনবল সংকট। পাশাপাশি অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, টিকার সংকট, দুর্গম এলাকায় টিকা পরিবহনের জটিলতা ও সময়মত টিকা না পাওয়া সহ অভিভাবকদের অসচেতনতার কারনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। যা অনেক শিশুকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সমস্যা সমাধান নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন করা জরুরী। অবস্থান ভেদে নতুন পদ সৃষ্টি এবং সেখানে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে টিকাদান প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) তে সহায়তা করবে। ২০৩০ সালে থেকে স্ব-অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচী পরিচালনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ ইমা ব্রিংহাম বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ কর্মসূচির ফলেই দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি তৃণমূলের স্বাস্থ্যকর্মী-মাঠকর্মীদের আন্তরিকতা আর কমিউনিটির জনগণ, বিশেষ করে মায়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণেই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে সাফল্য আনা সম্ভব হয়েছে। সরকার দেশের সকল শিশুকে শতভাগ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা করছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মো: আব্দুল আজিজ এমপি বলেন, “টিকাদান কর্মসূচীতে আমাদের বেশ কিছু বাধা আছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ইপিআই কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানে একটি সক্রিয় দেশ। টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষা পাচ্ছে, এবং সুস্থ সবল হিসাবে শিশুরা বেড় উঠছে। এই শিশুরাই আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, কানন আরা বেগম, অনিমা মুক্তি গোমেজ, নাদিয়া বিনতে আমিন, ফরিদা ইয়াসমিন এবং দ্রোপদী দেবী আগারওয়াল। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অফ হেলথ মায়া ভ্যানডেনেন্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (টিকাদান) ডাঃ রিয়াদ মাহমুদ গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (গ্যাভির) পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (EAP) প্রধান স্যাম মুলার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশে প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি ও এএইচ) ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার লোকজন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর সমন্বয়ক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ডঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম।