চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। রোগটি নিয়ন্ত্রণে এ মুহূর্তে ঠিক কী করণীয় সে বিষয়ে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক ভিডিও বার্তায় তিনি বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কবিরুল বাশার বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আমরা এডিস মশা নিয়ে যে গবেষণা করি, তাতে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জুলাই মাসেই আমরা বলেছিলাম, বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ খারাপ হবে। এ তথ্য বিভিন্ন পত্রিকা এবং টেলিভিশন প্রকাশ করেছিল। সেপ্টেম্বরে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া, প্রচুর মানুষ বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এ মুহূর্তে আমাদের তিনটি কাজ করতে হবে। সেগুলো হলে: হটস্পট ম্যানেজমেন্ট, লার্ভি সাইডিং এবং ব্রিডিং সোর্স ম্যানেজমেন্ট। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট হলো যে বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, তার ২০০ মিটারের ভেতর ফগিং করে সব উড়ন্ত মশা মেরে ফেলতে হবে। যদি উড়ন্ত মশা থাকে, তবে তা ওই বাড়ির কিংবা প্রতিবেশীর বাড়ির কাউকে আক্রান্ত করবে। এভাবে ডেঙ্গু আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাবে।
‘দ্বিতীয়ত, লার্ভি সাইডিং হলো — যেসব জায়গা থেকে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে, সেসব জায়গায় লার্ভি সাইডিং প্রয়োগ করে লার্ভা নষ্ট করে দিতে হবে। তাহলে এডিস মশা নতুন জায়গা আক্রমণ করতে পারবে না।
‘তৃতীয়ত, ব্রিডিং সোর্স ম্যানেজমেন্ট হলো: এডিস মশা হতে পারে, সে রকম পাত্র কোথাও রাখা যাবে না। এ কাজে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে বাড়ি কিংবা এর আশপাশে কোথাও কোনো পাত্র পড়ে না থাকে যেখানে পানি জমা হয়ে এডিস মশার জন্ম হতে পারে। এ কাজগুলো করা হলে আমরা ডেঙ্গুকে সামনের দিনগুলোতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবেও বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী, আর ৪৮ শতাংশ পুরুষ।