ধরুন, আপনি কোনো কক্ষে গেছেন আর আপনার হঠাৎ মনে হলো যে আপনি সেখানে আগেও গেছেন। কিন্তু আপনি ভালো করেই জানেন যে সেটি সম্ভব নয়। এরকম হতে পারে কোনো ঘটনার ক্ষেত্রেও। এই যে অনুভূতি- এটাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘দেজা ভ্যূ’।
এমিল বোর্যাক নামে একজন প্যারাসাইকোলজিস্ট দেজা ভ্যূ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন । তিনি আগে যেনো দেখেছির অনুভূতির বর্ণনা করেছিলেন দেজা ভ্যূ শব্দটি দিয়ে। গবেষণা অনুযায়ী আমাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনে একবার হলেও দেজা ভ্যূ দেখে থাকেন।
দেজা ভ্যূ গবেষক ক্রিস মোলিন বলেন, যখন আমরা একেবারে নতুন কোনো জায়গা বা অভিনব কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই , তখনই এই অনুভূতিটা সবচেয়ে প্রবল হয়। একেবারে নতুন জায়গায় গিয়ে যখন আমাদের জায়গাটা চেনা মনে হয়। আবার এটাও জানি সেখানে আমরা আগে কখনো যাইনি। তখন এই দুয়ের মধ্যে একটা বিরাট দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। গবেষণা বলে, মানুষ যতো বেশি ভ্রমণ করে ততো বেশি দেজা ভ্যূ’র অনুভূতি হয়।
সাধারণত তরুণ বয়সীদের বেশি দেজা ভ্যূ হয়। বয়স কম থাকলে ঘন ঘন দেজা ভ্যূ হয়। তবে সাধারণত মাসে একবারের বেশি নয়। বয়স ৪০ বা ৫০ এর কোঠায় থাকলে দেজা ভ্যূর হার কমে আসে। অনেক মানুষের দিনভর দেজা ভ্যূ হয়। বেশির ভাগ মানুষের জন্য এই দেজা ভ্যূ হচ্ছে এক বিরল ও খুবই ক্ষণস্থায়ী একটি মুহূর্তের অভিজ্ঞতা।
তবে কোনো কোনো মানুষের জন্য এই দেজা ভ্যূ এক মারাত্মক সমস্যা। অনেকের দেজা ভ্যূ হয় সারাদিন ধরে। ঘন ঘন দেজা ভ্যূ হওয়ার সঙ্গে সর্ম্পক আছে বিরল এক ধরনের এপিলেপসি বা মৃগি রোগের। এটিকে বলা হয় টেম্পোরাল লোব এপিলেপসি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, দেজা ভ্যূর অনুভূতির জন্য দায়ী মস্তিস্কের এমন একটি অংশ যার নাম টেম্পোরাল লোব। মস্তিস্কের এই অংশটি কোনো সার্কিট থেকে যখন কোনো স্মৃতির সংকেত দেয় সেটা আসলে তখন দেয়ার কথা নয়। তখনই ঘটে দেজা ভ্যূ।
তবে এই নিয়ে আরও নানা তত্ত্ব আছে। যেমন কারও কারও মতে, দুটি সমান্তরাল মহাবিশ্বের সংঘাতে দেজা ভ্যূ হয়। আর কেউ কেউ তো এটাকে পুনজন্মের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চান।
দেজা ভ্যূ’র বিপরীত অনুভূতির নাম জ্যামে ভ্যূ। অনেক সময় কোনো পরিচিত কিছু দেখে আমাদের অদ্ভূত অনুভূতি হয়। এটাকে বলে জ্যামে ভ্যূ। এক্ষেত্রে পরিচিত কোনো মানুষের চেহারা দেখে আপনার মনে হতে পারে লোকটি অপরিচিত।
সূত্র : বিবিসি