ঢাকাশুক্রবার , ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

দেশে প্রথমবার রিওভাইরাস শনাক্ত

রঞ্জন কুমার দে
জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ২:৫৯ অপরাহ্ণ । ৫৬ জন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার এক শিশুর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। শিশুটি ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল, এবং তার নমুনা পরীক্ষার পর রিওভাইরাস উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটেও আরও তিনটি কেস শনাক্ত করা হয়েছে।

রিওভাইরাস শব্দটি এসেছে “Respiratory Enteric Orphan” থেকে। এটি একটি ডিএনএ ভাইরাস, যা মানুষের দেহে গুরুতর সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা খুব বেশি না থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে তা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের জন্য এ ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে হালকা জ্বর, পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব এবং শ্বাসকষ্ট।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, রিওভাইরাস মূলত জল এবং খাদ্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়া, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও ভাইরাসটি ছড়ায়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং স্যানিটেশনের সমস্যা রয়েছে, সেখানে এ ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরের রোগীদের নমুনা বিশ্লেষণের সময় এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি একটি নতুন সংযোজন হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রিওভাইরাস এর আগে থেকেই বিদ্যমান। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এটি এখন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সতর্কতা জারি করেছে। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানি পান করা, ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

রিওভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, সংক্রমণের লক্ষণ অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে শরীর নিজেই ভাইরাসটি দমন করতে সক্ষম হয়। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তুলনামূলকভাবে কম সক্ষম। এছাড়া, যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, রিওভাইরাস সাধারণত প্রাণঘাতী না হলেও এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পরপরই জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় হাসপাতালগুলোকে রোগীদের বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে ভাইরাসটির ওপর গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর আগে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল। রিওভাইরাস শনাক্তের ঘটনাটি সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ধরনের হুমকি মোকাবিলার জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

রিওভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা, বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, আমারদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে, সাধারণ মানুষকে আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। যেহেতু এ ভাইরাসটি নতুন, তাই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান। তবে প্রাথমিক সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ ভাইরাসের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।