ঢাকাবুধবার , ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

ধুলাদূষণে ধূসর ঢাকা, অস্বাস্থ্যকর বায়ুমান বাড়াচ্ছে রোগ-বালাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ । ১০৭ জন

শীত এলে প্রায়ই বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করে ঢাকা। ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর। এর পেছনে অন্যতম দায় ধুলার। এ দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সেগুলো দূষণ রোধ করতে পারছে না। ফলে দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই শীর্ষস্থানে থাকছে রাজধানী ঢাকা।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ধুলার দূষণে রোগবালাই থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাবপত্র, বাসাবাড়ি, খাবার-দাবার সবকিছুতেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরের বায়ুদূষণ রোধে সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিশেষ করে ধুলাদূষণের প্রধান উৎস নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও সেগুলো মানছে না সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয় নেই। ফলে শহরে মারাত্মক আকার ধারণ করছে ধুলা দূষণ।

প্রথম সর্বোচ্চ উৎস নির্মাণকাজ, দ্বিতীয় কারণ হলো শিল্পকারখানা, তৃতীয় সর্বোচ্চ হলো ফিটনেসবিহীন যানবাহন। বর্তমানে শঙ্কা হলো নির্মাণবিধি না মেনে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট, রাস্তা কাটাকাটির কারণে ধুলাবালি বেশি হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর যদি নজরদারি রাখতো তাহলে এ উৎসগুলো থেকে দূষণ হতো না।

দূষণবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের গবেষণা বলছে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ ৩০ শতাংশ দায়ী। ঢাকার বায়ুদূষণে শিল্পায়নের প্রভাব ও আশপাশের ইটভাটার পাশাপাশি নির্মাণ স্থান হলো ধুলা দূষণের প্রধান উৎস। এছাড়া নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার সময় বড় বড় মালবাহী গাড়িতে ছাউনি না থাকায় ছড়াচ্ছে ধুলা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বা মেরামতের সময় ধুলাবালি যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে না যায়, সেজন্য নির্মাণ স্থানে যথাযথ ছাউনি বা ঢেকে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। একই সঙ্গে ভেতর ও বাইরে নির্মাণসামগ্রী (মাটি, বালি, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি) যথাযথভাবে ঢেকে রাখা এবং দিনে কমপক্ষে দুবার পানি ছিটানোর কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব নির্দেশনা অনুসরণ না করায় রাজধানীতে ধুলার পরিমাণ বাড়ছে।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো ছিল। কিন্তু সেগুলো মানা হয় না। মানাতে তেমন কোনো পদক্ষেপও দেখা যায় না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের ডিরেক্টর জিয়াউল হক বলেন ঢাকায় বায়ুদূষণ না কমার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ৩০-৩৫ শতাংশ দূষণ আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু বাকি ৬৫ শতাংশ আমাদের। এখন সরকারিভাবে যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে, তাদের তো নির্দেশনা মানতে হবে। যারা বেসরকারিভাবে ঘরবাড়ি বানায়, তাদেরও মানতে হবে। নিয়ম হলো যেখানে রাস্তা কাটা হবে এটা ঢেকে রাখতে হবে। যেন ধুলাবালি না বের হয়। সবাই মিলে যদি এসব বিষয়ে খেয়াল রাখি তাহলে দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।

জিয়াউল হক আরও বলেন, নির্দেশনাগুলো প্রতিফলিত হচ্ছে না দেখেই আমরা এগোতে পারছি না। নির্দেশনাগুলা বাস্তবায়ন করাটা আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যারকে সভাপতি করে একটি কমিটি হয়েছে সেখানে এ ব্যাপারে দুটি মিটিংও হয়েছে।