ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ ২০২৪
  • অন্যান্য

ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হার অধূমপায়ীদের তুলনায় ৩ গুণ বেশি : গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৫:৩৫ অপরাহ্ণ । ১৫৭ জন

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীতে অধূম্পায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার ৩ গুণ বেশি ছিল এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর। আজ (২৮ মার্চ, ২০২৪) বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীতে ধূমপায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৬ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা এসএলটি (জর্দা-গুল-সাদা পাতা) ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মধ্যে ২.১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন “দ্যা রিলেশনশিপ বিটউইন স্মোকিং অ্যান্ড কভিড-১৯ আউটকামস ইন টার্মস অফ মর্বিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালনা করে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের “স্বাস্থ্য বাতায়ন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার”-এ ১২ জুন ২০২০ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১২৭,০৭১ জন সেবা গ্রহীতার মধ্যে ১৬০৭ জনের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা এমপি। তিনি বলেন, তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। নানান গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কত ক্ষতিকর। তাই তামাক রুখতে সবার অংশগ্রহণ একান্ত জরুরী এবং আমরা যেকোন ভাবে এক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ এমপি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশের আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করতে হবে। মাননীয় সংসদ সদস্যরা অনেক সচেতন এবং উদ্যমী। সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করেছেন। করোনার সাথে ধূমপানের সম্পর্কের নিরূপনে যে গবেষণা করা হয়েছে তার ফলাফলে আমরা শঙ্কিত। আমাদের মধ্যে তামাক বিষয়ে দ্রুত সচেতন হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আফতাব উদ্দীন সরকার এমপি বলেন, সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগসহ তামাকের অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের তামাক চাষ নিয়েও সচেতন হতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তামাকের নিয়ন্ত্রণ জরুরী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক এমপি বলেন, ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা গবেষণার ফলাফলে দেখতে পাই যে ধূমপানের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকের প্রভাবেও করোনায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এই বিপুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কানন আর বেগম এমপি বলেন, তামাক নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনে পাঠ্যবইতে টেক্সট রাখতে হবে। এর মাধ্যমে জন সচেতনতা বাড়বে এবং তামাকের বিস্তার রোধ করা যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অরুণা মুক্তি গোমেজ এমপি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ধূমপান এবং তামাকের ক্ষতি নিয়ে গবেষণা আরো বেশি দরকার। পাশাপাশি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে হবে।

ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের সাথে কোভিড-১৯’র মৃত্যুহার এবং অসুস্থতার সম্পর্ক নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। গবেষণার ফল প্রকাশে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল অধূমপায়ীদের থেকে ৭৩ শতাংশ বেশি এবং ধূমপান ছেড়ে দেয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ এরও বেশি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল ৩৬ শতাংশ বেশি। তিনি আরো জানান গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে কোভিড-১৯ এর উচ্চ মৃত্যুহারের সাথে সম্পর্কিত কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস (টাইপ-২), হাইপার টেনশন, কিডনির সমস্যা, নিদ্রাহীনতা এবং কার্ডিওভাসকুলারসহ অন্যান্য সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয়।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনকে ১০০ ভাগ ধূমপানমুক্ত রাখা, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে তামাক পণ্য তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখা, তামাকের যে কোন প্রচারণা নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাকে শক্তিশালী করে তামাকের বিস্তার রোধ করা জরুরী। একই সাথে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে তামাক সম্পর্কিত চিকিৎসা এবং তামাক ব্যবহার রোধে কার্যকর কাউন্সিলিং করার জন্য।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ৭০৪ মিলিয়ন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ২২ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৯৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জন। করোনাকালীন সময় থেকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার আওতায় স্বাস্থ্য বাতায়ন দেশে করোনা রোগীদের সেবা দানে সচেষ্ট ছিল।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা গবেষণার ওপর প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নেন।