ঢাকাসোমবার , ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নড়াইলে নবগঙ্গার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় ভুক্তভোগীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২১, ২০২৪ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ । ২২ জন

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুরের ফুলি বিবির সম্পত্তি বলতে ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই ‘বাড়িটিই’। সেটিও চলে গেল নবগঙ্গার পেটে। সর্বশান্ত ফুলি বিবি যেন দুঃখের অনুভূতিও হারিয়ে ফেলেছেন। উদাসভাবে চেয়ে থাকতে থাকতে বলেন, ‘এই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমিও নেই, যে সেখানে একটু মাথা গোঁজার মতো জায়গা পাব। আমার বাড়ি গিলে নিয়েছে নবগঙ্গা নদী।’

হঠাৎ আবার সচেতন হয়ে উঠেন। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘কোথায় থাকব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকব। আকাশের নিচে ছাড়া আমার থাকার কোনো জায়গা নেই।’

একই অবস্থা নবগঙ্গার ভাঙনের শিকার তবিবুর শেখের। তিনি বলেন, ‘আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়িটুকু তাও নদীতে চলে গেছে। অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম। আমার আর কিছুই থাকল না। জানি না এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব।’ বসতবাড়ি আর ও আঙিনার সবজি খেতটুকুই ছিল হাসি বেগমের সম্বল। এসব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

হাসি বেগম বলেন, ‘আমার আার কিছুই নেই সব নদীতে চলে চলে গেছে। আশ্রয় নেওয়ার মতো এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই। রাতে ঘুম নেই ঠিকমতো খাবার নেই, কীভাবে রাত দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’

শুধু কাঞ্চনপুর নয়, নবগঙ্গার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি, কাঁচাপাকা ঘর, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কালিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসত বাড়ি, বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

বারইপাড়া মাহাজন সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার একর ফসসি জমি, ভেসে যাবে শত শত মাছের ঘের।

কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ মুক্তার বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কে দিন পার করছি। আমাদের এই রাস্তা যদি ভেঙে যায় তাহলে আমাদের বাড়িসহ বাকি সবগুলো বাড়ি নদীতে চলে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের এলাকার সব পুকুর ঘেরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই এই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভাঙন রোধে অতীতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন রোধের প্রাথমিক চেষ্টা করা হয়। ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

নদী ভাঙনের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরিভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের জন্য সার্ভে করে প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।